তালেবান সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আফগানিস্তানে পপি উৎপাদন কমেছে ৯৫ শতাংশ: জাতিসংঘ
মাদক তৈরির প্রধান উপাদান হওয়ায় গত বছর পপি চাষ নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার। তারপর থেকে আফিম, হেরোইন ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য পপির যোগান কমতে শুরু করে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এখন ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
আজ রোববার (৫ নভেম্বর) জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউনোডক) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থাটি জানায়, ২০২৩ সালে সমগ্র আফগানিস্তানে মাত্র ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পপি চাষ করা হয়েছে, অথচ এক বছর আগেও ২ লাখ হাজার হেক্টর জমি ছিল পপি চাষের অধীন। চাষের মাত্রা বিপুলভাবে কমায় মাদক উৎপাদনে আফিমের সরবরাহ ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩৩৩ টনে নেমেছে।
ইউনোডক জানায়, আফগানিস্তানের অন্যতম অর্থকরী ফসল পপি। পপি ফুল থেকে সংগ্রহ করা আফিমের রপ্তানিমূল্য অনেক সময়েই দেশটির অন্যসব আনুষ্ঠানিক বা বৈধ পণ্য রপ্তানির চেয়ে বেশি হয়। তাছাড়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই চাষ কমে যাওয়ার কৃষকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, যে দেশের দুই- তৃতীয়াংশ মানুষের এরমধ্যেই মানবিক ত্রাণ সহায়তা দরকার, সেখানে ব্যাপকভাবে পপি চাষ কমার এ ঘটনা বড় ধরনের অর্থনৈতিক পরিণাম বয়ে আনবে। অর্থাৎ, আয়ের একটি প্রধান উৎস বন্ধ হওয়ার প্রভাব দেখা যাবে।
ইউনোডকের নির্বাহী পরিচালক ঘাদা ওয়ালি এক বিবৃতিতে বলেন, 'আফগান কৃষকদের আফিমের বিকল্প অন্য টেকসই জীবিকার উপায় করে দিতে আগামী মাসগুলোয় আফগানিস্তানকে জরুরি-ভিত্তিতে শক্তিশালী বিনিয়োগ করতে হবে। অবৈধ আফিমের বাজারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে এটি একটি বাস্তবসম্মত সুযোগকে সামনে এনেছে। মাদকটির এই বাজার আফগানিস্তান ও বহির্বিশ্ব উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।'
বিশ্বের ৮০ শতাংশ অবৈধ আফিমের সরবরাহ আসে আফগানিস্তান থেকে। সেখানে যোগানের এই বড় পতনের ঘটনা- আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আফিমের ব্যবহার কমাতে পারে। কিন্তু, এতে ফেন্টানিল বা কৃত্রিম আফিমের মতো বিকল্প মাদকের ব্যবহার বাড়ার ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘের মাদক-বিরোধী সংস্থাটি।
২০২২ সালের এপ্রিলে তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা মাদক জাতীয় ফসলের চাষবাসকে নিষিদ্ধ করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা জমিতে থাকা বাদবাকি পপি ফসল ধবংস করবে। ২০০০ এর দশকেও ক্ষমতায় থাকার সময় পপি চাষ বন্ধ করেছিল তালেবান। কিন্তু, তার চরম অর্থনৈতিক পরিণাম দেখা দেয়।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হেলমান্দের মতোন আফগানিস্তানের যেসব এলাকায় তালেবানের ব্যাপক জনসমর্থন ছিল, সেখানে পপি চাষের মাত্রাও ছিল বেশি।
ইউনোডক জানিয়েছে, বর্তমানে অনেক কৃষক কম চাষে ঝুঁকেছেন, তবে এতে পপির তুলনায় আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।