ইসরায়েলের পক্ষে সংবাদ পরিবেশনের প্রতিবাদে কয়েকশ সাংবাদিকের চিঠি
বিশ্বের কয়েক ডজন সংবাদ মাধ্যমের প্রায় ৭৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে গাজায় ইসরায়েলের সাংবাদিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। একইসাথে চিঠিতে উপত্যকাটিতে চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশনের সমালোচনা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চিঠিটিতে বিশ্বের প্রভাবশালী নিউজরুমগুলিকে 'অমানবিক বক্তব্যের জন্য দায়ী' বলে অভিহিত করা হয়। আর এই নেতিবাচক বক্তব্যের মাধ্যমেই ফিলিস্তিনে 'জাতিগত নির্মূলের ন্যায্যতা প্রদান করা হয়েছে' বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে সাংবাদিকদের খোলা চিঠিটি নিয়ে চলছে বহু আলোচনা-সমালোচনা। কেননা বিশ্বের নানা প্রান্তের লেখক, শিল্পী ও শিক্ষাবিদরা চলমান যুদ্ধ নিয়ে মিডিয়া কভারেজের সমালোচনা করেছেন।
কিন্তু রয়টার্স, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, বোস্টন গ্লোব ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাক্ষর করা চিঠিটিতে চলমান যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশন নিয়ে একদিকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। একইসাথে এই চিঠিতে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশন নিয়ে নিউজরুমের মধ্যেকার বিভাজনের চিত্র।
এক্ষেত্রে কিছু কিছু সাংবাদিকের জন্য চিঠিটিতে স্বাক্ষর করা ছিল বেশ বিপজ্জনক ও হুমকিস্বরূপ। কেননা আগে বহু সাংবাদিককেই জনসম্মুখের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যক্ত করার জন্য পক্ষপাতের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু যারা সাম্প্রতিক চিঠিটি প্রকাশ করেছে তাদের যুক্তি এই যে, পক্ষপাত নয় বরং ন্যায্যতা নিশ্চিতের জন্যই তাদের এই আহ্বান।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে ২০২২ সালে পুলিৎজার পুরস্কারের ফাইনালিস্ট ও বোস্টন গ্লোবের সম্পাদকীয় বোর্ডের সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ ফায়াদ। তিনি বলেন, "আশা করছি যে, চিঠিটির মাধ্যমে আমরা ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারবো। একইসাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সাংবাদিক ও সম্পাদকেরা ইস্যুটিকে ঘিরে যে ভাষা ব্যবহার করেন তা নিয়ে ফের চিন্তা করবেন।"
অন্যদিকে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী লস এঞ্জেলেস টাইমসের রিপোর্টার সুহানা হোসেন বলেন, "চিঠিটিতে মূলত সাংবাদিকদের নিজেদের কাজটিই করতে বলা হয়েছে। একইসাথে নিজেদের ক্ষমতাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়েছে।"
তবে চিঠিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে করা প্রতিবেদনে শব্দচয়নের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা। এক্ষেত্রে চিঠিতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনী হামলাকে তুলে ধরতে 'বর্ণবাদ', 'জাতিগত নির্মূল' এবং 'গণহত্যা' ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১৪০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। জিম্মি করা হয়েছে ২৪০ জন নাগরিককে। তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমা হামলায় প্রায় ১১ হাজার গাজাবাসী নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে যেয়ে মোট ৩৯ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। 'কমিটি টু প্রজেক্ট জার্নালিস্ট' এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অন্যদিকে রিপোর্টারস উইদআউট বর্ডার্সের এক তদন্তে দেখা যায় যে, গত ১৩ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনী সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলা করেছে। এতে রয়টার্সের সাংবাদিক ইসম আবদুল্লাহ নিহত হন এবং আরও ছয় জন সাংবাদিক আহত হন।
যদিও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে তেল আবিবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
অন্যদিকে অক্টোবরের শেষের দিকে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা রয়টার্স ও এএফপিকে জানান, তারা গাজা উপত্যকায় কর্মরত এই দুই গণমাধ্যমের কর্মীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।
৭৫০ জনের স্বাক্ষরকৃত চিঠিটি ছাড়াও সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহজুড়ে আরও বেশ কয়েকটি খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। এইসব চিঠির বেশিরভাগেই ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।
'দ্য নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস' বিখ্যাত সব লেখকদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। যেখানে 'গাজায় উদ্ভূত বিপর্যয় বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার' আহ্বান জানানো হয়।