যুক্তরাষ্ট্র-চীন শীর্ষ বৈঠক: পুনরায় সামরিক যোগাযোগ চালু করতে সম্মত বাইডেন-শি
নিজদের সামরিক বাহিনীর মধ্যে পুনরায় যোগাযোগ শুরু করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হলো। খবর বিবিসির।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বিরল বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'আমরা সরাসরি, উন্মুক্ত ও পরিষ্কার যোগাযোগে পৌঁছেছি।'
এক বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
তবে দু'পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এতে কমেছে, তা বলা যাবে না। কারণ, বৈঠক শেষে বেড়িয়েই শি'কে স্বৈরশাসক হিসেবে আবারও মন্তব্য করেন বাইডেন। এর আগে গত জুনেও শি'কে নিয়ে একই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে বাইডেনের এ মন্তব্যের সমালোচনা করেছে।
তবে উভয়পক্ষই এ বৈঠককে সফল হিসেবে অভিহিত করেছে।
বাইডেন আরো বলেন, তারা একে-অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর কাছে একটি ঐতিহাসিক কান্ট্রি এস্টেটে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের পরে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের ঘাটতি থেকেই 'দুর্ঘটনা' (সংঘাত) ঘটতে পারে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, এখন থেকে আমরা ফোনে সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারব।
গত বছর তৎকালীন মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সামরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। বেইজিং স্বায়ত্ত্বশাসিত তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে এবং প্রয়োজনে জোর করে এটিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করারও হুমকি দিয়েছে।
বাইডেন বলেন, যদিও তাদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টি শি তার 'অবস্থানে দৃঢ়' ছিলেন। শি বলেন, আগের যে কোনো আলোচনার চেয়ে এবারের আলোচনাটি ছিল 'সবচেয়ে গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ'।
পরে মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একটি নৈশভোজে কথা বলার সময় শি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলেন।
শি বলেন, তিনি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন কূটনীতি ও সহযোগিতার পথে চলতে সম্মত হয়েছেন। চীন-মার্কিন সম্পর্কের যে দুয়ার খুলেছে, তা এখন আর বন্ধ করা যাবে না ।
তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে আরো বেশি সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে এবং একে-অপরের মধ্যে আরো যোগাযোগের পথ তৈরি করতে হবে।
তবে দুই দেশের সম্পর্ক এখনও কতটা শীতল তা বাইডেনের বক্তব্য থেকে অনুমান করা যায়। বাইডেন, যখন তিনি মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তখন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জানান, তিনি শি'কে স্বৈরশাসক বলে মনে করেন।
বাইডেন বলেন, তিনি (শি) একজন স্বৈরশাসক এই অর্থে যে তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি একটি দেশ পরিচালনা করেন... এমন একটি সরকার গঠনের ভিত্তিতে যা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা'। এর আগে গত জুনেও শি'কে নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন বাইডেন। চীনা কর্মকর্তারা বাইডেনের এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এটিকে 'অত্যন্ত অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে অভিহিত করেন।
বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাইডেনের মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছে, তার বর্ণনাটি 'অত্যন্ত ভুল' এবং 'দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কারসাজি'।
সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার পাশাপাশি উভয় পক্ষ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনার উৎস হয়ে ওঠা এমন সব ক্ষেত্রে কয়েকটি চুক্তি ঘোষণা করেছে।
এসব ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের প্রবাহকে মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেওয়া, যা দেশে অতিরিক্ত মাত্রায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
চুক্তির অধীনে চীন সরাসরি সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে যারা এই রাসায়নিক তৈরি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন বলেন, চীনের এ উদ্যোগ 'জীবন বাঁচাবে'।
দুই নেতা ইসরায়েল ও গাজার সংঘাত নিয়েও আলোচনা করেন। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, উসকানিমূলক মনে হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে ইরানকে বিরত থাকার জন্য চীন-ইরান সম্পর্কের প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
বিশ্বের এই দুই পরাশক্তি যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরীক্ষা করতেও সম্মত হয়েছে। তাদের মধ্যে তাইওয়ান প্রসঙ্গেও দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। মার্কিন এক কর্মকর্তার মতে, তাইওয়ান প্রসঙ্গকে শি যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের 'সবচেয়ে বড় ও বিপজ্জনক সমস্যা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আলোচনার পরে চীন জানায় যে 'সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ আবারও চালু হয়েছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাইডেন ও শির মধ্যে বৈঠকটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত ছিল। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে বড় কোনো অগ্রগতি হতে পারে সে বিষয়ে খুব একটা আশা করছেন না উভয়পক্ষের কর্মকর্তারা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় একটি সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন গুলি করে ভূপাতিত করা হলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।