গাজার আল-শিফা হাসপাতালে কী 'খুঁজে' পেল ইসরায়েল?
আজ (বৃহস্পতিবার) গাজার আল-শিফা হাসপাতালে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির বৃহত্তম এ হাসপাতাল কমপ্লেক্সটিতে রাত ২ টার দিকে আক্রমণ চালানো হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই তেল আবিব অভিযোগ করে আসছে যে, আল-শিফাকে হামাস নিজেদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানের পর তাদের এ দাবির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
তারই ফলশ্রুতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মেডিকেল কমপ্লেক্সটির একটি ভবনের ভেতরের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ঐ ভিডিওতে দেখা যায়, এমআরআই ল্যাবে তিনটি ব্যাগ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। ঐ ব্যাগগুলোতে রাইফেল, গ্রেনেড, হামাসের ইউনিফর্ম এবং জ্যাকেট রয়েছে। একইসাথে তেল আবিবের পক্ষ থেকে গোলাবারুদ ছাড়া অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি ল্যাপটপ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, "এই অস্ত্রগুলির একটিও হাসপাতালের ভিতরে থাকার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।" এটি হাসপাতালটির ভেতর লুকিয়ে রাকা এমন অনেক অস্ত্রের অল্প কিছু অংশ বলে মনে করেন তিনি।
হাসপাতালটিতে অভিযানের আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে জানানো হয়, হামাস আল-শিফা হাসপাতালের মাটির নিচে তৈরি করা টানেল দিয়ে যাতায়াত করছে। একইসাথে হাসপাতালটি হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার ও সামরিক চৌকি হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
ইসরায়েলের এমন দাবির সাথে সুর মিলিয়েছেন জো বাইডেনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, একটি হাসপাতালকে মিলিটারী হেডকোয়ার্টার বানিয়ে যুদ্ধাপরাধ করছে হামাস।
যদিও হাসপাতালটিতে ইসরায়েলের অভিযানের ২৪ ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে; তবুও সেখানে হামাস পরিচালিত টানেল কিংবা মিলিটারি কমান্ড সেন্টারের অস্তিত্ব দেখাতে পারেনি ইসরায়েল।
অন্যদিকে প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারি মোস্তফা বারঘোতি মনে করেন, আল শিফা হাসপাতালের পাতালের যে ভিডিও দেখানো হয়েছে সেটি ইসরায়েলি বাহিনী নিজেই তৈরি করে থাকতে পারে।
আল জাজিরাকে মোস্তফা বারঘোতি বলেন, "ভিডিওতে ইসরায়েলি বাহিনী একটি রাইফেল এবং একটি ল্যাপটপ দেখিয়েছে। এটি সহজেই সেখানে রাখা যায় আর বলা যায় যে, এটি সেখানে পাওয়া গিয়েছে।"
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে আল-শিফা হাসপাতালের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটি কোনো রকম এডিট কিংবা কাট ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
তবে অজানা কারণে ভিডিওটি পোস্টের কিছুক্ষণ পর মুছে ফেলা হয় এবং দেখতে প্রায় ঠিক একইরকম ভিডিও আপ দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যদিও ইসরায়েলের এ দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক বিবৃতটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হামাসের কাতারভিত্তিক সিনিয়র সদস্য ইজ্জাত এল রাশক বলেন, "দখলদার বাহিনী এখনও মিথ্যা কথা বলছে। তারা কিছু অস্ত্র, কাপড় ও সরঞ্জাম এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।"
ইজ্জাত এল রাশক জানান যে, হামাসের পক্ষ থেকে বারবার জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রেডক্রসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যাতে করে পরখ করে দেখে যায়, গাজার পাতালে টানেল আছে কি-না।
মোস্তফা বারঘোতি বলেন, "স্বাধীন পর্যবেক্ষক দলকে আল-শিফায় তদন্তের যে আহ্বান, সেটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তেল আবিব এমনটা চায় না কেননা তারা জানে যে, তারা মিথ্যা কথা বলছে।"
বর্তমানে আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। প্রায়শই এতে করা হচ্ছে হামলা। আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিস থেকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
আল-শিফা হাসপাতালে হামলা করে ইসরায়েলি বাহিনী সার্জারির জন্য করা একটি বিশেষায়িত ভবন ধ্বংস করেছে। পার্টিশন, রুমের মাঝখানের দেয়াল এবং ভবনের ভেতরের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতাল কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে শত শত রোগী, চিকিৎসক ও নার্স। একইসাথে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালটিতে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে।
এ সম্পর্কে বারঘোতি বলেন, "এই যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের আক্রমণ করা হচ্ছে। একইসাথে হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা ও চিকিৎসা সুবিধা ধ্বংস করা হচ্ছে।"