মৃত নাগরিকদের সম্পদ থেকে গোপনে লাভ করেছেন রাজা চার্লস
উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে নাগরিকদের মৃত্যুর পরে যে বেওয়ারিশ সম্পদ থাকত, সেখান থেকেও লাভবান হচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমের হাজারো মৃত মানুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে 'ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ছেন' তিনি।
যেসব ব্যক্তি কোনো উইল না করেই মারা যেতেন অথবা যাদের উত্তরাধিকার কেউ থাকতেন না, তাদের আর্থিক সম্পদ লাভ করতেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
'দ্য ডাচি অভ ল্যাঙ্কাস্টার' নামে বিতর্কিত ওই ভূ-সম্পত্তি থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা পাচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। সামন্ত যুগের ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় গত কয়েক বছরে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন তিনি।
ডাচি অভ ল্যাঙ্কাস্টারের এই আর্থিক সম্পদের নাম 'বোনা ভ্যাকেনশিয়া'। মৃত্যুর পর যাদের উত্তরাধিকারী স্বজন থাকে না কিংবা যারা কোনো উইলও করে যান না, তাদের সম্পদ সংগ্রহ করে ডাচি। গত দশ বছরে ডাচি ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সম্পদ সংগ্রহ করেছে। ডাচি হচ্ছে ডিউক বা ডাচেসের শাসনাধীন এলাকা।
সিংহাসনের উত্তরসূরী হিসেবে গত ৭০ বছর ধরে ২৪তম ডিউক অব কর্নওয়াল ছিলেন তৃতীয় চার্লস। সেই সূত্রেই এসব আর্থিক সম্পদ বাগিয়েছেন তিনি।
রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এসব আর্থিক সম্পদ দান করা হয়েছে। কিন্তু আদতে এ সম্পদের খুব সামান্য অংশই দাতব্য সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়েছে। ডাচির নথিপত্রও বলছে, মৃত ব্যক্তিদের সম্পদ থেকে অর্জিত আয় চার্লসের নিজস্ব সম্পত্তির সংস্কার ও লাভে ব্যয় করা হয়েছে।
নথিতে উঠে এসেছে, এসব সম্পদ রাজার সম্পত্তি বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হয়েছিল।
গার্ডিয়ানে একাধিক নথির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের বেওয়ারিশ সম্পত্তিকেই রাজার সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়েছে।
একটি নথির কোড নাম দেওয়া হয়েছে এসএ৯। এই বিশেষ নথির মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি রাজার সম্পত্তিতে পরিণত করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে গ্রামীণ বাড়ি, খামার, বাড়ি, পেট্রল পাম্পসহ নানা সম্পদ রয়েছে।
ফাঁস হওয়া অন্যান্য নথিপত্রে দেখা গেছে, টাউন হাউস, গ্রামীণ কটেজ, কৃষি ভবন, পেট্রোল স্টেশন ও শস্যাগারের পেছনেও এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ইয়র্কশায়ারে পুরনো ফার্মহাউস সংস্কার, ছাদ ও জানালা সংস্কার, বয়লার স্থাপন ও দরজা পরিবর্তনেও ব্যয় করা হয়েছে ওই অর্থ।
দাতব্য সংস্থার পরিবর্তে বোনা ভ্যাকেনশিয়ার তহবিলের এ ব্যবহার রাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাড়িয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই সেই মৃতের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। তাদের দাবি, এটা অনৈতিক কাজ হয়েছে। এ ব্যাপার অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
তবে গোটা ঘটনা নিয়ে নানা ইঙ্গিত দেওয়া হলেও বাকিংহাম প্যালেস এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গার্ডিয়ান পত্রিকার অনুসন্ধানে নতুন ওই পলিসির কথা সামনে এসেছে। এই পলিসির মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা সম্পদ দিয়ে রাজপরিবারের সম্পত্তির দেখভাল. উন্নতি করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই অর্থেই রাজপরিবারের হেরিটেজ সম্পত্তির সংস্কার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সমালোচকদের দাবি, এভাবে অপরের সম্পত্তি ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।