আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকুক কিংবা না থাকুক; গাজায় যুদ্ধ চলবে: ইসরায়েল
আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকুক কিংবা না থাকুক; গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল (বুধবার) এমন সংকল্প ব্যক্ত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন।
যদিও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত চলমান যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। গাজায় চলমান নির্বিচারে বোমাবর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গত মঙ্গলবার আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে দাতাদের সামনে বাইডেন বলেন, "ইসরায়েলের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইসরায়েলের আরো অনেকেই রয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষে ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেকেরই সমর্থন রয়েছে। কিন্তু গাজায় নির্বিচার বোমা হামলার কারণে তারা সেই সমর্থন হারাতে শুরু করেছে।"
গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার জন্য বাইডেন ও তার দলের মধ্যেও চাপ রয়েছে। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারাও ইদানীং গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
বাইডেন তার বক্তব্যে নেতানিয়াহুর সাথে একটি ব্যক্তিগত কথোপকথনের দিকে ইঙ্গিত করেন, যেখানে ইসরায়েলি নেতা বলেছিলেন, "আপনি জার্মানিতে বোমা ফেলেছেন, আপনি পরমাণু বোমা ফেলেছেন, অনেক বেসামরিক লোক মারা গেছে।"
এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছিলেন, "হ্যাঁ, এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। আমরা ৯/১১ এ যে ভুলগুলো করেছিলাম, সেই একই ভুলগুলো করবেন না।"
অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে চালানো হচ্ছে একের পর এক চেষ্টা। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হয়েছে।
প্রস্তাবটির পক্ষে ১৫৩ টি দেশ ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০ টি দেশ। যার মধ্যে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।
যদিও রেজুলেশনটি মানার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এটি বিশ্বব্যাপী গাজার সমর্থনে একটি নির্দেশক হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এ সম্পর্কে ভোটের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুলাজিজ আলওয়াসিল বলেন, "আমরা সকলকে ধন্যবাদ জানাই যারা গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে করা এই খসড়া রেজুলেশনটি সমর্থন করেছে। এটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে গৃহীত হয়েছে। একইসাথে এটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পক্ষে আন্তর্জাতিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করেছে।"
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেন, "বর্তমান পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের জন্য একটি উপহার। এটি ইসরায়েলের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি হুমকি প্রদানের পথও তৈরি করবে।"
আজ (বৃহস্পতিবার) বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের ইসরায়েল সফরের কথা রয়েছে। সেখানে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করবেন। আলোচনায় সংঘাত-পরবর্তী গাজাকে কীভাবে শাসন করা হবে তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে 'মতানৈক্য' সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছিল। এরপরেই তেল আবিবের পক্ষ থেকে শুরু হয় নির্বিচারে বোমা হামলা।
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
একইসাথে গাজা উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় ৮০ ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তেল আবিব গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এতটা নির্মমভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে যে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এটিকে 'পৃথিবীর মধ্যে জাহান্নাম' বলে অভিহিত করেছেন। একইসাথে উপত্যকাটিতে খাদ্য, জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুতের প্রবেশাধিকারও কঠোরভাবে সীমিত করেছে দেশটি।