দক্ষিণ কোরিয়ায় বিয়ে ও সন্তানকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ভাবা তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাড়ছে, কমছে জন্মহার
দক্ষিণ কোরিয়ায় কিম নামের বছর বিশের এক জানালেন, তিনি বিয়ে করতে চান না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'আমি কোনো পরিবার চালাতে চাই না, এখনই না, আসলে কখনোই না। আমি কত টাকা আয় করি অথবা আমি যথেষ্ট যোগ্য নই—এসব নিয়ে কেউ সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করুক, তা আমি চাই না।'
কিম বলেন, উপার্জন করে পরিবার চালানো ভীষণ চাপের কাজ। আর কর্মজীবী স্ত্রী থাকার অর্থ হলো স্ত্রীর হাতেই নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া।
পার্ক নামের বছর ত্রিশের একজন যুবতি জানালেন, তিনি ও তার স্বামী সন্তান চান না।
তিনি বলেন, 'দুই বছর আগে আমরা বিয়ে করেছি, কিন্তু সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা নেই। সন্তান নেওয়াটা আমার আর ওর জন্য শারীরিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে অনেক বড় দায়িত্ব—ওর চেয়ে আমার দায়িত্বই বেশি হবে। আমার চাকরি আছে। তাছাড়া জীবনের সেরা সময়টা আমি বাচ্চা বড় করে নষ্ট করতে চাই না। আমি যেভাবে আছি, ভালো আছি।'
তাদের মতো বিয়ে কিংবা বাচ্চা নিতে অনিচ্ছুক তরুণ-তরুণীর সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে। এতে দেশটির অতি-নিম্ন জন্মহার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকাশ করা সরকারি তথ্য বলছে, বিশ ও ত্রিশের কোঠায় থাকা অর্ধেক দক্ষিণ কোরীয় যুবক-যুবতিই বিয়েকে প্রয়োজনীয় মনে করছেন না। আর প্রতি পাঁচ বিবাহিত দম্পতির মধ্যে দুই দম্পতিই বলেছেন, তাদের সন্তানের কোনো প্রয়োজন নেই।
ওই সরকারি প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৫০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাবে। তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ৫১.৭ মিলিয়ন, ২০৭২ সালে তা কমে ৩৬.২ মিলিয়নে দাঁড়াবে।
আর ২০৩৩ সাল নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবীণ জনসংখ্যা—৭০ বছর বা তদূর্ধ্ব—বর্তমানের ৫.৮৯ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১০ মিলিয়ন হবে।
২০২৭ সালে দেশটির প্রবীণ জনসংখ্যা ১৪.৭ মিলিয়নের পৌঁছাতে পারে, যা মোট জনসংখ্যার ৪০.৭ শতাংশ হবে।
শুক্রবারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২২ সালে বিশের কোঠায় থাকা মাত্র ২৭.৫ শতাংশ দক্ষিণ কোরীয় নারী বলেছেন যে একজন নারীকে 'অবশ্যই বিয়ে করতে হবে', অথবা 'একজন নারীর বিয়ে করা ভালো'। ২০০৮ সালে এ হার ছিল ৫২.৯ শতাংশ।
একইভাবে এই বয়সি মাত্র ৪১.৯ শতাংশ পুরুষ একই উত্তর; ২০০৮ সালে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ৭১.৯ শতাংশ।
ত্রিশের কোঠায় থাকা ৩১.৮ শতাংশ নারী বলেছেন যে তারা মনে করেন, নারীদের অবশ্যই বিয়ে করা উচিত অথবা নারীর বিয়ে করা ভালো। ২০০৮ সালে এ হার ছিল ৫১.৫ শতাংশ। অন্যদিকে এই বয়সি পুরুষদের ৪৮.৭ শতাংশ একই উত্তর দিয়েছেন। ২০০৮ সালে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ৬৯.৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তরুণ-তরুণী বলেছেন, তাদের বিয়ে করতে না চাওয়ার সবচেয়ে কারণ অর্থাভাব।
১৯৭৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সি নারীদের গড়ে শিশু জন্মদানের হার ছিল ২.৭৬। কিন্তু ২০২১ সালে এ হার মাত্র ১.১২-এ নেমে আসে।
২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩৯.১ শতাংশ মানুষ একাকী থাকার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে এ হার বেড়ে ৪৭.৭ শতাংশ হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৯৩ শতাংশ দক্ষিণ কোরীয় বলেছেন যে প্রতিবন্ধীরা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু মাত্র ২.৭ শতাংশ বলেছেন যে প্রতিবন্ধীরা স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে গ্রহণযোগ্য।