বিশ্বের মোট খাদ্য অপচয়ের ৫০ শতাংশই হয় সৌদি আরবে
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির অ্যাডভোকেট শেফ লায়লা ফাথাল্লা জানিয়েছেন, প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্য অপচয় হয়।
আর জাতিসংঘের খাদ্য বর্জ্য কর্মসূচির (ফুড ওয়েস্ট প্রোগ্রাম) তথ্য অনুসারে, মোট খাদ্য অপচয়ের ৫০ শতাংশ হয় সৌদি আরবে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
সৌদি আরবের পরিবেশ, পানি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুল রহমান বিন আবদুল মোহসেন আল ফাদলি নিশ্চিত করেছেন যে, সৌদি আরবে খাদ্য বর্জ্যের জন্য প্রতি বছর ৪০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে খাদ্য অপচয়ের হার ৩৩ শতাংশেরও বেশি। এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি ও সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
গত বছর সৌদি শস্য সংস্থার (সাগো) একটি গবেষণা অনুসারে, খাদ্য অপচয়ের কারণে সৌদি যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ভোক্তা ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে, এর পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল।
এছাড়া সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর ৪.০৬ মিলিয়ন টন খাদ্য নষ্ট হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩.১ শতাংশ পণ্যের সমতুল্য। গড়ে একজন ব্যক্তি বছরে প্রায় ১৮৪ কেজি খাদ্য অপচয় করেন।
পুরো সৌদিজুড়ে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটিতে প্রতি বছর কেবল সবজি অপচয় হয় তিন লাখ ৩৫ হাজার টনেরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ৩৮ হাজার টন জুচিনি, ২ লাখ ১ হাজার টন আলু, ৮২ হাজার টন শসা, ১ লাখ ১০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং ২ লাখ ৩৪ হাজার টন টমেটো।
৩০ হাজার ৮০০ জনের নমুনার ওপর ভিত্তি করে করা এই গবেষণায় প্রধান খাদ্যসামগ্রীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কথাও উঠে এসেছে। গবেষণামতে, প্রতি বছর ৯ লাখ ১৭ হাজার টন আটা ও রুটি, ৫ লাখ ৫৭ হাজার টন চাল এবং ২২ হাজার টন ভেড়ার মাংস নষ্ট হয়।
এছাড়া উটের মাংস (১৩ হাজার টন), অন্যান্য মাংস (৪১ হাজার টন) ও হাঁস-মুরগিরও (৪ লাখ ৪৪ হাজার টন) ব্যাপক অপচয় হয়।
আরও জানা গেছে, খেজুর অপচয় হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার টন। ফল অপচয় হয় প্রায় ৬ লাখ টন, যার মধ্যে ৬৯ হাজার টন কমলা, ১২ হাজার টন আম এবং দেড় লাখ টন তরমুজ রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতি বছর সৌদি আরবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য অপচয়ের পরিমাণ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
অপচয় কমানোর উপায়
শেফ ফাথাল্লা অপচয় রোধের সংস্কৃতি প্রচার এবং খাদ্য অপচয় হ্রাস করার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি প্রতিটি পরিবারে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে রান্না করা, সীমিত খাবার ক্রয় করা এবং অভাবীদের উদ্বৃত্ত খাবার দান করার মতো পদক্ষেপের পরামর্শ দেন।
এছাড়া নতুন কেনা খাবারগুলো পুরাতন খাবারের সঙ্গে রেফ্রিজারেটরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি, যাতে নতুন কেনা খাবারগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে না থাকে।
উল্লেখ্য, বারিলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট পরিচালিত ২০২১ সালের ফুড সাসটেইনেবিলিটি ইনডেক্স (এফএসআই) অনুসারে, খাদ্য ক্ষতি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেরা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ইতালি, জার্মানি, জাপান ও নেদারল্যান্ডস।