২০২০ সাল থেকে বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনীর সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, গরিব আরো গরিব হয়েছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীর শীর্ষ পাঁচ ধনীদের সম্পদ আরও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
রোববার প্রকাশিত অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক বৈষম্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ২০২০ সাল থেকে এই বিলিয়নিয়ারদের মোট সম্পদ ১১৪ শতাংশ বেড়ে ৮৬৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এক দশকের মধ্যেই প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার বা এক লাখ কোটি ডলার সম্পদমূল্যের ধনকুবেরকে দেখবে বিশ্ব।
একই সময়ে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ বিলিয়ন মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে, যাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ-সংঘাত ও জলবায়ু সংকটের সাথে লড়তে হচ্ছে।
সম্পদের ব্যাপক বৈষম্যের এই অবস্থায়, বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রায় ২৩০ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে অক্সফাম।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে যখন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে ফোর্বসের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তৈরি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে অক্সফাম।
অক্সফাম আমেরিকার ইকোনোমিক অ্যান্ড রেসিয়াল জাস্টিস বিভাগের পরিচালক নাবিল আহমেদ বলেন, "বৈষম্য বাড়লেও কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। শ্রমিকেরা ধর্মঘট ও নতুন চুক্তির মাধ্যমে তাদের শক্তি বাড়িয়েছে, যা তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও, কিছু সরকার তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারা শ্রমিকদের অধিকার শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করছে।"
আহমেদ বলেন, "আমরা একটি নতুন গিল্ডেড যুগে (যখন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অনিয়মে ভর করে গুটিকয়েক ব্যক্তি সম্পদ অর্জন করে) রয়েছি। অন্যদিকে, শ্রমিক, নীতি-নির্ধারক, শ্রম ইউনিয়ন ও কমিউনিটি সংগঠকেরা এটি ভেঙে নতুন পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।"
সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে টেসলা ও স্পেসএক্সসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি পরিচালনাকারী ইলন মাস্কের।
গত বছরের নভেম্বরের শেষে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৫.৫ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ৭৩৭ শতাংশ বেশি।
একই সময়ে ফরাসি বিলাসবহুল পণ্য জায়ান্ট লুই ভিঁতো (এলভিএমএইচ) চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট এবং তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯১.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ১১১ শতাংশ বেড়েছে।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৬৭.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে, ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৪৫.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ১০৭ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ পাঁচ ধনী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট, যার মোট সম্পদ ৪৮% বৃদ্ধি পেয়ে ১১৯.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অক্সফামের তথ্যমতে, সামগ্রিকভাবে ২০২০ সাল থেকে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, তাদের বিত্ত এই সময়ে হওয়া মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে তিনগুণ দ্রুত বেড়েছে।
এছাড়াও, মার্কিন বিলিয়নিয়ারদের (যাদের মধ্যে অনেকেই তাদের নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলোর শেয়ার মালিকানা থেকে সম্পদ অর্জন করেন) সম্পদ ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
কর্পোরেট ক্ষমতা
এ বছরের প্রতিবেদনে অক্সফাম জানায়, বিশ্বের ১০টি বৃহৎ পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে- একজন বিলিয়নিয়ার সিইও অথবা একজন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন।
ওয়েলথ এক্স-এর তথ্যের ভিত্তিতে অক্সফাম জানায়, বিশ্বের আর্থিক সম্পদের ৪৩ শতাংশই মাত্র ১ শতাংশ ধনীর দখলে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট সম্পদের ৩২% এর মালিক এই ধনকুবেররা এবং এশিয়ার মোট সম্পদের ৫০ শতাংশই তাদের হাতে।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের মোট আর্থিক সম্পদের ৪৮ শতাংশের মালিক বিত্তশালী ১ শতাংশ মানুষ এবং ইউরোপের ৪৭% সম্পদের মালিক অতি-ধনীরা।
অক্সফাম জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে বিশ্বের ১৪৮টি বৃহৎ কর্পোরেশন প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। এটি ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তাদের গড় মুনাফার চেয়ে ৫২.৫ শতাংশ বেশি।
অক্সফাম আরও জানিয়েছে, তেল ও গ্যাস শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং আর্থিক শিল্প গত বছর বা তার আগের বছরের গড়ের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। তারা সরকারগুলোকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বেহার এক বিবৃতিতে বলেন, ''জনগণের শক্তি কর্পোরেট ক্ষমতা ও বৈষম্য কমাতে পারে এবং বাজারকে আরও ন্যায্য এবং বিলিয়নিয়ারদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে পারে।''
তিনি আরও বলেন, ''একচেটিয়া ব্যবসা ভেঙে দিতে, শ্রমিকদের ক্ষমতায়নে, এই বিশাল কর্পোরেট মুনাফার ওপর কর আরোপ করতে এবং সবচেয়ে বড় কথা জনসাধারণের জন্য পণ্য ও সেবা উৎপাদনে তাদের বিনিয়োগ করাতে সরকারগুলোকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।''