যুদ্ধ থামলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া হবে না; আমেরিকাকে নেতানিয়াহু
গাজায় সংঘাত শেষ হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করবে ইসরায়েল। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বার্তাই দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খবর বিবিসির।
নেতানিয়াহু গাজায় 'সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত' হামলা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং গাজা উপত্যকার অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েল তার অমানবিক আক্রমণ বন্ধ করতে এবং যুদ্ধের অবসানের জন্য আলোচনায় যেতে বহির্বিশ্বের কাছে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্র এবং এমনকি কিছু প্রতিপক্ষ দেশও 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান' পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। তারা এমন একটি সমাধানের প্রস্তাব দিচ্ছে যেখানে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রও সহাবস্থান করবে।
অনেকে আশাবাদী যে, চলমান এ সংকট দেশগুলোকে কূটনৈতিক আলোচনার দিকে ঠেলে দিতে পারে। যার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে চলা এ সংঘাতের ইতি টানবে। তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কূটনৈতিক সমাধানে ফিরে আসার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে এর বিরোধিতা করেছেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমে সব ভূমির ওপর ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। যার মধ্যে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই শর্তটি ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্বের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হলেও ইসরায়েলের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে এসেছেন। গত মাসে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠা রোধ করতে পেরে তিনি গর্বিত, তাই তার সর্বশেষ মন্তব্যে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।
তবে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের প্রতি ইসরায়েলের প্রকাশ্য প্রত্যাখ্যান এবং বর্তমান সামরিক কৌশলের প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকার পশ্চিমা মিত্রদের সাথে ক্রমবর্ধমান বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তোলার ইঙ্গিত দেয়।
গত ৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় ১,৩০০ ইসরায়েলিকে নিহত হয়েছে। আএ প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে আসছে। তবে গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং মানবিক বিপর্যয়ের দৃশ্য সামনে আসায় পশ্চিমা সরকারগুলো এখন ইসরাইলকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস ধারাবাহিকভাবে বিস্তৃত বিমান হামলার চেয়ে আরও নির্ভুল-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া, স্থল আক্রমণকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং সংঘাত-পরবর্তী গাজা পরিচালনায় ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
কিন্তু ওয়াশিংটনের পরামর্শ, বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পরামর্শ আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েল। ফলে, ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের স্পষ্ট সমর্থনের বিষয়ে কিছু আমেরিকান মহলে ক্ষোভ ও হতাশা আরও তীব্র হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে যে সহায়তা দিচ্ছে তার ওপর শর্ত আরোপের জোরালো আহ্বানও জানানো হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর সর্বশেষ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, তার সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য কাজ করা বন্ধ করবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য তার সরকারকে সমর্থনকারী উগ্র ডানপন্থীদেরকে খুশি করলেও চলমান সংঘাতের মানবিক ক্ষতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলকে হতাশ করতে পারে। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি হামাসকে নির্মূল করার চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যের চেয়ে জিম্মিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।