চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নওয়াজ শরীফ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পূর্বাভাস
২০২৪ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হবেন নওয়াজ শরীফ। এমন ভবিষ্যদ্বাণীই করেছে ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিবিসি, গার্ডিয়ান ও এএফপির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এ মেয়াদে নির্বাচিত হলে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন নওয়াজ।
বার্তা সংস্থা ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানিরা তাদের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরও যদি নওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় আসতে না পারেন তবে তা বিস্ময়ের কারণ হবে। চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ শরিফের সামনে সুযোগ থাকবে ২০১৭ সালে যেসব অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজ শরীফকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কট্টর সমর্থকদের মুখোমুখি হতে হবেও বলে জানিয়েছে তারা।
মার্কিন টিভি ব্লুমবার্গের মতে, করাচিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ী নেতারা একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট এবং পরবর্তীতে একটি ভঙ্গুর জোট সরকারের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। অনেকে ধারণা করছেন, নওয়াজ শরিফ বা তার ভাই শাহবাজ এই জোটের নেতৃত্ব দেবেন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ মাদিহা আফজাল বলেন, নওয়াজ শরীফ যদি আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তাকে দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথম চ্যালেঞ্জটি হল পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা, বিশেষ করে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার সামলানো। আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করা।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ৭৪ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ চলতি নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্টতই এগিয়ে আছেন। এত বছর বিদেশে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পরও যদি তিনি আবার এ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তবে তা তার রাজনৈতিক জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখা হবে।
সিএনএন আরও জানায়, নওয়াজের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, তার সাথে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়া পাকিস্তানের সাবেক নেতা প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
সাবেক জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কূটনীতিক ও কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসির মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষায় নওয়াজ বরাবরই দক্ষ। আর এবার নির্বাচিত হলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে দেশে ফেরার পর আদালত তার দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও কারাদণ্ড বাতিল করায় চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার হয়েছে তার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আইনি মামলায় লড়াই করতে থাকা নওয়াজকে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান খান। ২০২৪ সালের এ নির্বাচনকে তাই নওয়াজের ভাগ্য পরিবর্তনের মঞ্চ হিসেবে দেখছেন অনেকে। আর ইমরান খান কারাগারে থাকায় নওয়াজ শরিফের আরেক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট উল্লেখ করেছে, 'ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে নওয়াজ শরীফ ও তার পিএমএলএন ক্ষমতায় আসতে পারে। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন, তাহলে পিটিআইয়ের জন্য একটি অলৌকিক চমক হবে।'
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন বলেছে, 'পাকিস্তানের রাজনীতির রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় তার দলের পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথ অনেকটা পরিষ্কার। নওয়াজ শরিফ এমন একজন মানুষ, যার সেনাবাহিনীর প্রতি নমনীয় নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।'
স্পুটনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোন না কেন, তাকে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও সন্ত্রাসবাদের গুরুতর সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এই বিষয়গুলো অন্যান্য দেশের সাথে পাকিস্তান কীভাবে আচরণ করে তাও প্রভাবিত করতে পারে।
আর দ্য টেলিগ্রাফ লিখেছে, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খান ফৌজদারি অপরাধে জেলে থাকায় নওয়াজ শরীফের সামনে একটি সহজ বিজয় অপেক্ষা করছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন