পাকিস্তানের ইতিহাসে 'সবচেয়ে নোংরা' ৫ নির্বাচনের র্যাংকিং
পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ১১টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে।
সাধারণত, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হয়। যাতে সেই প্রার্থী দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারে।
কিন্তু প্রায় এক ডজন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন দেশটিকে দীর্ঘদিনের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। বরং এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন্দল আরও বেড়েছে।
এর একটি বড় কারণ হচ্ছে সিস্টেমটা 'কারচুপি' বা 'ম্যানিপুলেটেড' হয়ে কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তির পক্ষে কাজ করে।
নিচে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতামতের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের সবচেয়ে 'নোংরা' বা সবচেয়ে অন্যায্য পাঁচটি নির্বাচনের কথা তুলে ধরা হলো:
৫. ১৯৯৭ সালের নির্বাচন
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে চারটি নির্বাচন দেশটির টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট দলিল।
বেনজির ভুট্টোকে নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্র সেসময় হয় তার জনপ্রিয়তা খর্ব করার চেষ্টা করেছে, নতুবা নওয়াজ শরীফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে সহায়তা করেছে।
তবে একবার শীর্ষ আসনে বসার পর নওয়াজ শরিফ বহুমুখী সংঘাতে জড়িয়ে পড়তেন। সরাসরি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে না হলেও বেসামরিক পদে তাদের বহু পছন্দের লোকের সঙ্গেই তিনি বিরোধে জড়িয়েছেন।
বেনজির ও নওয়াজ; এদের একটি পক্ষের প্রতি বিরূপ হলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য পক্ষের প্রতি সমর্থন দিয়েছে সামরিক বাহিনী।
১৯৯৭ সালের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ জাতীয় পরিষদের মোট ২১৭ টি আসনের মধ্যে ১৩৭ টি আসন জিতে ভূমিধস জয় লাভ করেন। তবে সেসময় নওয়াজের উত্থানের চেয়েও অনেক বেশি বিস্ময়কর ছিল বেনজিরের পতন।
কারণ ১৯৯৩ সালে ৮৯টি আসন পাওয়া পিপিপি চার বছর পর মাত্র ১৮টি আসন পায়।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বেনজিরের ভাই মুর্তজা ভুট্টোর হত্যাকাণ্ড এবং তার স্বামী আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পিপিপির জনপ্রিয়তাকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করার শঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে ব্যবধানে দেখা গেছে তা বিস্ময়কর।
ঐতিহাসিক ও ব্যঙ্গ রচয়িতা নাদিম এফ পারচা ডন ডটকমকে বলেন, '১৯৯৭ সালের নির্বাচন বেশ বিতর্কিত ছিল।'
৪. ১৯৮৫ সালের 'দলহীন' নির্বাচন
১৯৮৫ সালের নির্বাচন মূলত ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেসময় জেনারেল জিয়াউল হক একটি সামরিক অভ্যুত্থান করেছিলেন এবং দেশবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তার ৯০ দিনের প্রতিশ্রুতির আট বছর পর নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন হয়েছিল, যা আগে কিংবা এরপর আর কখনো দেখা যায়নি।
'দলহীন' নির্বাচন নামে অভিহিত ১৯৮৫ সালের নির্বাচন এক অর্থে অনন্য ছিল। কারণ ১৯৭৩ সালের সংবিধানে সময়োপযোগী সংশোধনীর কারণে তৎকালীন কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রার্থী দাঁড় করানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুসরাত জাভেদ বলেন, 'আজকে শুধু একটি দলকে (পিটিআই) বাধা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ১৯৮৫ সালে পুরো নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।'
তাহির মেহেদী বলেন, '১৯৮৫ সালের নির্বাচন সংসদীয় গণতন্ত্র, দল, প্রশাসন ইত্যাদির পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।'
তিনি বলেন, 'আজও নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার এই রেওয়াজ... এই অশুভ প্রবণতার মূল কারণ ১৯৮৫ সালের নির্বাচন।'
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক মাজহার আব্বাস মনে করেন, ১৯৮৫ সালের নির্বাচন শুধু কারচুপিই করেনি, তা দেশের সমাজের ভিত্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ডন নিউজ ইংলিশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'নির্দলীয় নির্বাচন নিজেই এক ধরনের প্রাক-নির্বাচনী প্রতারণা।'
তিনি বলেন, 'এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজকে সামন্ততান্ত্রিক, বর্ণপ্রথা ইত্যাদিতে বিভক্ত করেছিল।'
৩. ২০০২ সালের জেনারেলের নির্বাচন
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিষয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
কিন্তু পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার পরিবর্তে ক্ষমতাধর মহল যদি সামনে ও কেন্দ্রে থাকে এবং রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রয়োজনীয়তাটুকুও অনুভব না করে তাহলে কী হয়?
২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফ একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি উভয় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেই বছর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাত্র তিন মাসেরও কম আগে গঠিত হয় পিএমএল-কিউ নামের দলটি।
দলটি নিজে নবজাতক হলেও এতে যে রাজনীতিবিদরা ছিলেন তারা দুই প্রতিষ্ঠিত দল থেকে অভিজ্ঞ ছিলেন।
১৯৯০ এর দশক জুড়ে চলা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ২০০২ সালের নির্বাচনে।
সেসময় পিপিপি ও পিএমএল-এন প্রধানমন্ত্রীত্ব পাওয়ার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়ছিল।
কিন্তু ২০০২ সালে এই দুই দলকে (পিপিপি, পিএমএল-এন) ছুড়ে ফেলা হয়, তাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং অবশিষ্ট দলগুলো মিলে কিংস পার্টি (পিএমএল-কিউ) গঠন করেছিল।
ঝুঁকি না নিতে মোশাররফ রাষ্ট্রপতি হিসেবে পিপিপি ও পিএমএল-এনকে জব্দ করার জন্য 'পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডার-২০০২' জারি করেছিলেন।
নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করা হয়েছিল, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের প্রধানকে অবশ্যই পাকিস্তানে উপস্থিত থাকতে হবে এবং তারা আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হতে পারবেন না।
প্রাক-নির্বাচনী কৌশল এতটাই অত্যাধুনিক ছিল যে ভোটের দিনে আর বেশি কিছু করতে হয়নি।
ডন নিউজের সাংবাদিক জারার খুহরো বলেন, 'সাধারণ নির্বাচন তো অনেক হয়েছে, সেবার ছিল জেনারেলের নির্বাচন।'
তিনি বলেন, '২০০২ সালের নির্বাচনে অবিশ্বাস্য কারচুপি হয়েছিল। পুলিশ থেকে শুরু করে রিটার্নিং অফিসার, ভোট গণনাকারী প্রত্যেকেই একটি পক্ষে (রাষ্ট্রের) কাজ করেছে।'
খুহরো বলেছেন, পাকিস্তানের নির্বাচনী ইতিহাসে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে প্রায়ই সংস্কারের বেশ ধরা হয়।
২০০২ সালে শর্ত হিসেবে বলা হয়, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে অবশ্যই প্রার্থীকে স্নাতক পাস হতে হবে।
তিনি বলেন, 'আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বিষয়টি ইতিবাচক, তবে সেসময় পাকিস্তানে শিক্ষার অবস্থা কী? তাহলে কি আপনারা লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন না?'
তবে মোশাররফপন্থী ধর্মীয়-রাজনৈতিক দলগুলোর একটি 'মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল' জোটকে ব্যতিক্রম হিসেবে মোশাররফ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন।
খুহরো বলেন, 'মাদ্রাসা সার্টিফিকেটকে ডিগ্রির সমান মনে করা হতো। তাই আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতিবিদদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, অথচ তাদেরকে (আলেমদের) বিশেষ অনুমতি দিয়েছেন!'
২. ১৯৯০ সালে সব কারচুপির জননী
১৯৯০ সালের নির্বাচনে কারচুপির ভিত্তি প্রকৃতপক্ষে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের আগে রচিত হয়েছিল। যখন শুধু বেনজির ভুট্টোকে মোকাবিলা করার জন্য ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) তৎকালীন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল হামিদ গুলের নেতৃত্বে ৯টি দলের জোট ইসলামি জামহুরি ইত্তেহাদ (আইজেআই) গঠিত হয়েছিল।
নুসরাত জাভেদ ডন ডটকমকে বলেন, '১৯৮৮ সালে বেনজির ভুট্টোর পরিষ্কার বিজয় ঠেকাতে রাতারাতি আইজেআই গঠন করা হয়েছিল। হঠাৎ করে মুহাম্মদ খান জুনেজো, নওয়াজ শরিফ, জামাত-ই-ইসলামি, গোলাম মুস্তাফা জাতোই- সবাই একজোট হয়ে গেল। চোখের পলকে এই ৯টি দল একজোট হয়ে গেল '
নবগঠিত আইজেআই গুপ্তচর প্রধানের মস্তিষ্কপ্রসূত হওয়া সত্ত্বেও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জিততে পারেনি, তবে ১৯৯০ সালে তারা প্রস্তুত হয়েই ছিল। এবার তারা যাতে কাঙ্ক্ষিত ফল পায় তা নিশ্চিত করতে আইজেআইয়ের চেয়ারম্যানকে (জাতোই) তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রী হিসেবে বসানো হয়েছিল।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, ১৯৯০ সালের নির্বাচনে আসলেই কারচুপি হয়েছে বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান, সিওএএস জেনারেল (আর) আসলাম বেগ এবং ডিজি আইএসআই আসাদ দুরানি পি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
এছাড়াও, পিপিপির বিজয় ঠেকাতে একটি বড় ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ইউনুস হাবিবের মাধ্যমে সরকারি কোশাগার থেকে ১৪০ মিলিয়ন রুপি বিরোধী রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
মাজহার আব্বাস বলেন, '১৯৯০ সালের নির্বাচনে যা হয়েছিল তা ছিল সব কারচুপির জননী।'
তিনি বলেন, 'আসগর খান মামলাই একমাত্র দৃষ্টান্ত যেখানে বছরের পর বছর শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করেছিলেন। এতে বলা হয়ে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সত্যিই কারচুপি হয়েছিল। সম্ভবত এটিই একমাত্র নির্বাচন যাতে শেষ পর্যন্ত কারচুপি প্রমাণিত হয়েছে।'
পিপিপি-বিরোধী দলগুলোকে অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি বেনজিরের খ্যাতিও ক্ষুণ্ন করার কাজ করা হয়েছিল।
জোহরা ইউসুফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'বেনজিরের বিরুদ্ধে প্রচুর চরিত্র হননকারী ও নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলেও তারা অন্য কৌশল অবলম্বন করছিল।'
১. ২০১৮ সালের সবচেয়ে অন্যায্য নির্বাচন
ডন ডটকমের সঙ্গে কথা বলা প্রায় সব বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্যায্য সাধারণ বাছাই।
২০১৮ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল ঠিক এক বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে। যাকে দুর্নীতির অভিযোগে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে গণমাধ্যমের ওপর ব্যাপক সেন্সরশিপ দেখা গিয়েছিল। অনেক 'নির্বাচিত' হয় পিএমএল-এন ছেড়েছেন অথবা পিটিআইতে যোগ দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে দক্ষিণ পাঞ্জাব থেকে পিএমএল-এনের টিকিটধারীদের মধ্যে সাতজন দলীয় টিকিট ফেরত দিয়েছিলেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এদিকে, নির্বাচনের পরে এমকিউএম-পি ও পিএমএল-কিউ এর মতো আঞ্চলিক দলগুলো পরবর্তীকালে পিটিআইকে সমর্থন দিয়েছে।
পিটিআই সরকারের শেষের দিকে, এমকিউএম-পি আহ্বায়ক ড. খালিদ মকবুল সিদ্দিকী প্রকাশ্যে বলেন, তাদের দলকে পিটিআই সরকারে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
জোহরা ইউসুফ ডন ডটকমকে বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচন কারচুপির চেয়েও বেশি কিছু ছিল। অনেক পূর্ব পরিকল্পনা ও কারসাজি ছিল, রাজনৈতিক নেতাদের উপর তাদের দল ছেড়ে ইমরান খানের দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর তারিনের প্রাইভেট জেট ব্যবহার করা হতো প্রার্থীদের বহনের জন্য, এমনকি নেতাদের অপহরণ করে জিম্মি করে রাখা হতো যতক্ষণ না তারা পিটিআইতে যোগ দিতে রাজি হয়।'
ভোটের আগে ও পরে আনুকূল্য বাদ দিলে সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিতর্ক ছিল ভোটের দিনকে ঘিরে।
ভোটকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং অফিসারদের কাছে দ্রুত ফলাফল বিতরণের জন্য অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন রেজাল্ট ট্রান্সমিশন সিস্টেম (আরটিএস) অকেজো হয়ে পড়েছিল, ফলাফল সংকলন এবং জারি করার পুরো প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে পড়েছিল।
নাদিম এফ পারাচা বলেন, 'আরটিএসের পতনের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল সবচেয়ে অন্যায্য ও প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল এবং এখনও এর কোনও ব্যাখ্যা নেই।'
এর মানে এই নয় যে পিটিআইয়ের ভোট ব্যাংক ছিল না, তবে তাদের অতিরিক্ত ১৩ থেকে ১৪টি আসন দরকার ছিল এবং আরটিএসের ব্যর্থতা এটিকে সহজ করেছিল।
তাহির মেহেদীর মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ থেকে সরে আসা।
তিনি বলেন, '১৯৮৫ সালে সবকিছু বেশ নির্লজ্জ ছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হাইব্রিড সিস্টেমের আবির্ভাব ঘটে।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনের আগে কোন প্রার্থী দাঁড় করাবেন, কোন জোট গঠন করবেন, তা নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়েছে। এটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কারচুপির জন্ম, যার কিছুটা আরও উন্নত রূপ আমরা ২০২৪ সালে দেখতে যাচ্ছি।'
নুসরাত জাভেদ বলেন, 'পাকিস্তানে প্রায় সব নির্বাচনেই কারচুপি হয়েছে, শুধু তীব্রতায় তারতম্য রয়েছে। আর তার ভিত্তিতে সাম্প্রতিক ইতিহাসে ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল সবচেয়ে খারাপ।'
তবে ২০২৪ সালের নির্বাচন ২০১৮ সালকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।