পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন: সেই ’৭০ এর নির্বাচনের সঙ্গে তুলনায় টুইটারে ঝড়!
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। নির্বাচনের তিন দিন পরও চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই নির্বাচনের সঙ্গে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের তুলনা করছেন, যেখানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনে সরাসরি অংশ না নেওয়া দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার প্রতিপক্ষ নওয়াজ শরিফ উভয়ই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর ফল ঘোষণা শুরু হয়। দীর্ঘ এই সময় ধরে ফল আটকে রাখায় বা স্পষ্ট করে কিছু না বলায় প্রশ্ন উঠেছিল।
বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের দল একক দল হিসেবে সর্বাধিক আসন জিতেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়া কারাবন্দি খানের পিটিআই দলের প্রার্থীরা সামগ্রিকভাবে সর্বাধিক আসন জিতেছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে এবার কি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ইমরান খানকে সরকার গঠন করতে দেবে? নাকি সেই ১৯৭০ এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?
১৯৭০ সালের নির্বাচনের দিকে ফিরে তাকানো যাক। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পূর্ব পাকিস্তানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন ছিল এটি। দুটি দলই ছিল গণতন্ত্রপন্থী।
সে সময় জাতীয় পরিষদে সংরক্ষিত নারী আসন ব্যতীত পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান) ১৩৮টি ও পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ১৬২টি আসন ছিল। আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। যেখানে পিপিপি ১৩৮টির মধ্যে মাত্র ৮১টি আসনে জয় পায়।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরও শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরই জেরে শুরু হওয়া তীব্র রাজনৈতিক সংকট শেষ পর্যন্ত গড়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। যার পরিসমাপ্তি ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে।
দুটি নির্বাচনের মধ্যে তুলনা করে এক্সে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, '২০২৪ সালে, পাকিস্তানের সেই ১৯৭০ এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। আবারও সেই আঞ্চলিক উদ্বেগগুলো উঠে এসেছে, যা অতীতের সেই বিভাজন, সৃষ্টি ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের সম্ভাব্য সাদৃশ্যের দিকেই ইঙ্গিত করছে। ১৯৭০ সালের সেই মুহূর্তগুলোর সঙ্গে এসব ঘটনা মিল বহন করছে।'
আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, '১৯৭০ এর নির্বাচনের একটি পুনরাবৃত্তি। এই সময় তারা দেশকে ধ্বংস করতে পারেনি। তাই তারা সংবিধানকে ধ্বংস করছে।'
আরেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যেন ইমরান খানের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে। তিনি লিখেছেন, '১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি। এখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে নতি স্বীকার করতে হবে, যা তারা শেখ মুজিবের কাছে করেনি। যার ফলে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে হারিয়েছে। মনে রেখ, পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে থামাতে পারবে না যার সময় এসেছে।'
আরেক ব্যবহারকারী পোস্ট করেছেন, 'পাকিস্তানের নির্বাচন দেশে স্থিতিশীলতা এবং নিশ্চিয়তা আনবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ বিপরীত করেছে। এটি পাকিস্তানের জন্য জলে আটকে পড়ার মতো মুহূর্ত। যদি জনগণের রায়ের ভুল বিচার হয়, ভুল অর্থ করা হয় এবং ভুল কারো হাতে হস্তান্তর হয়, তাহলে এটি ১৯৭০ এর মতোই ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হতে পারে।'