পাকিস্তানের নির্বাচন: চূড়ান্ত ফলাফলেও এগিয়ে রইলেন ইমরান খান-সমর্থিত প্রার্থীরা
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান বিস্ময় দেখিয়েছেন কারাগারে অন্তরীণ থেকে। ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচনে তাঁর সমর্থিত, অর্থাৎ পিটিআই দলের রাজনীতিবিদরা স্বতন্ত্রভাবে ভোট করে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছেন। খবর বিবিসি ও দ্য ডনের।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে (একটি স্থগিত) ভোট হয়েছে। একটি আসনে ফল স্থগিত থাকার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৬৪ আসনে ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
শুধুমাত্র জাতীয় পরিষদেই ১০১ আসনে জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্ররা, তবে বিবিসি জানিয়েছে এদের মধ্যে ৯৩ জন হলেন ইমরানের দল তেহরিক -ই- ইনসাফ বা পিটিআইয়ের।
এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন।
তবে নির্বাচনে দল হিসেবে পিটিআইকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ১৮ মাস ধরে দলটির ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট পিএমএল-এন, পিপিপি জোট সরকার। পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও, সেখানে নির্বাচন কমিশন পিটিআই এর সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে এমন অভিযোগ রয়েছে।এই অবস্থায়, ইমরানের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতেছে। নির্বাচনের পরদিন কারাগার থেকে দেওয়া বক্তব্যে এই দাবি করেন ইমরান খান। নির্বাচনের দিনই সমস্ত ফলাফল ঘোষণা না করে, দুইদিন ধরে দফায় দফায় ফলাফল ঘোষণা করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
এসময় অভিযোগ ওঠে, ভোট পরবর্তী কারচুপি করে অন্যান্য দলের প্রার্থীদের জয়ী দেখানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের নির্বাচনী বিধিমালায় ফর্ম ৪৭ নামক একটি ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভোট গণনায় কারা এগিয়ে রয়েছেন সেটি সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের একটি ফর্মে জানিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অনেক আসনেই ফর্ম ৪৭ অনুযায়ী, শুরুতে ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও– পরে যখন আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় দেরি করা হতে থাকে, তখন দেখা যায় অনেক আসনেই ভোটের ফল ব্যাপকভাবে পালটে গেছে।
দলীয় নেতাদের তাই ফর্ম ৪৭ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশনা দেন ইমরান। এবং সেই অনুযায়ী, অনেক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীই ভোটের ভোটচুরির অভিযোগ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনে পিটিআই ও পিএমএল-এন উভয়ই বিজয় দাবি করেছে। দুই দলই এবার সরকার গঠন করতে চায়।
তারপরেও, নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছে। কারণ, পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবেই নওয়াজকে দেখা হয়েছিল। ভোটের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইমরানের দাবির সত্যতা। অর্থাৎ, পিটিআইয়ের পক্ষে গণজোয়ার হয়েছে ব্যালটে।
এমনকি কথিত নানান দুর্নীতির দায়ে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও– জনমনে তার ছাপ পড়েনি। পিটিআইকে নির্বাচনে দল হিসেবে অংশ না নিতে দেওয়ার পরেও তাদের জনসমর্থনে ভাটা পড়েনি।
তবে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা শেষ হওয়ায়, এই মুহূর্তে জোট গঠন নিয়েই উদ্যোমী নওয়াজ ও তাঁর দল। সেক্ষেত্রে, পিছিয়ে রয়েছে পিটিআই।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ১৩৪ আসন।