সরকার গঠনের জন্য পুরোনো বিবাদ ভুলতে রাজি ইমরান!
অতীতের তিক্ততা অতীতেই রাখতে চান পাকিস্তান তেহরিক -ই- ইনসাফ দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। গত শনিবার তাঁর বরাত দিয়ে এমনটাই জানান তাঁর আইনজীবী উমাইর খান নিয়াজি।
আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইমরান খান কেন্দ্রে ফেডারেল সরকার এবং পাঞ্জাব ও খাইবার-পাখতুনখোয়ায় প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে চান। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় জয়ের প্রেক্ষিতে একথা জানান তিনি।
পেশায় আইনজীবী নিয়াজি ইমরানের খুবই ঘনিষ্ঠ একজন নেতা। নির্বাচনে তিনি ইমরান খানের আদিনিবাস মিয়ানওয়ালি থেকে জাতীয় পরিষদের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি জানান, বিশেষ শক্তিগুলোর প্রতি (সেনাবাহিনী, বিচারবিভাগ) নওয়াজ শরীফকে জোট সরকার গঠন না করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান। কারণ, অতীতে (নওয়াজকে নিয়ে) এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কখনই কার্যকরী হয়নি।
নিয়াজি জানান, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অতীতের তিক্ততা, বিরোধের কথা ভুলতে রাজি আছেন পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা।
একইসঙ্গে, ভোটের ফলাফলে পিটিআই এর সদস্য যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে, রোববার তাঁদেরকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষোভ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ইমরানের এই সবুজ সংকেতের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পিটিআই। সরকার গঠনে নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের কোর কমিটি এক সভা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে, পিটিআই এর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করতে উমাইর নিয়াজিকে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। আলী আমিন গান্দাপুর এবং মিয়াঁ আসলাম ইকবাল নামের আরও দুই সিনিয়র নেতাকে খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবে প্রাদেশিক সরকার গঠনের জন্য নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সাথে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গওহর আলী খানসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা আশাপ্রকাশ করেন যে, নির্বাচনে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা জেতায় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পিটিআইকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন।
ইসিপির ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট পিটিআই
ভোট গণনার ফলাফল প্রার্থীদের জানিয়ে দিতে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ফর্ম ৪৫ বিধিমালা অনুসরণ করে। এতে প্রার্থীদের ভোটের দিনই বেসরকারিভাবে ফলাফলের চিত্র জানিয়ে দেওয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া এই ফলাফলে দেখা যায় অনেক আসনেই ভোট গণনায় বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন পিটিআই এর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলাফল এভাবে সেনাবাহিনীর পছন্দের বিরুদ্ধে যাচ্ছে দেখে হঠাৎ করেই ফল ঘোষণা স্থগিত রাখে ইসিপি। এবং পরবর্তীতে শুক্রবার থেকে আজ রোববার পর্যন্ত দুই দিন ধরে দফায় দফায় বিভিন্ন আসনের ফলাফল জানানো হয়। এতে দেখা যায়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী পরে নাটকীয়ভাবে হেরে গেছেন। এই প্রেক্ষিতে, দলটিও ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। পরাজিত প্রার্থীরা আদালতের শরণাপন্নও হতে শুরু করেছেন।
এবিষয়ে ইসলামাবাদের সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই চেয়ারম্যান গওহর আলী খান নির্বাচন কমিশনের প্রতি ফর্ম ৪৫ এর প্রথম ঘোষণার সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন করে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "(ইমরান) খান সাহেব এখন জেলে আছেন, কিন্তু তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আমরা গোলামির জিঞ্জির পরানো আর মানব না। পুরো চিত্র এখন আপনাদের সামনে; পিটিআইয়ের ওপর দমনপীড়ন সত্ত্বেও মানুষ কীভাবে তাঁদের প্রিয় নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে দলে দলে এসে ভোট দিয়েছেন তা আপনারা দেখেছেন।"
এসময় ব্যারিস্টার গওহর দাবি করেন, পিটিআই ১৭০ আসনে জিতেছে, তাই চূড়ান্ত ফলাফলে (যেখানে স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ১০১ আসনে) এত হেরফের কীভাবে হলো– সেটি উদঘাটনের জন্য তাঁরা আইনের আশ্রয় নেবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে একত্র করা ইসিপির দায়িত্ব, আর এই প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে কিনা– তা দেখার জন্য সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, তাঁদের একজন করে নির্বাচনি এজেন্ট এবং একজন করে অনুমোদিত পর্যবেক্ষক থাকার বিধান রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভোটের দিন অনেক কেন্দ্র থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। এমনকী ফলাফল সংকলনের সময়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী পিটিআই দলের হলে, তাঁর অনুপস্থিতিতেই একাজটি করা হয়েছে।
ফলে ইসিপির বিরুদ্ধে গুরুতর কারচুপির অভিযোগ এনেছে পিটিআই। কারণ জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৭০টিতেই জয়ের দাবি করছে পিটিআই। এর ভিত্তিতে তাঁরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি করেছে। যেখানে আজ রোববার চূড়ান্ত ফলাফলে ১০১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসিপি।