পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওমর আইয়ুবকে মনোনয়ন দিয়েছেন ইমরান খান
এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওমর আইয়ুবকে এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মিয়া আসলাম ইকবালকে মনোনয়ন দিয়েছেন ইমরান খান।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ওমর আইয়ুবকে এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে মিয়া আসলাম ইকবালকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
ব্যারিস্টার গহর এবং অন্যান্য পিটিআই নেতারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ কারাবন্দি দলীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করার পরে এই সিদ্ধান্ত জানান।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো পিটিআইও জোট সরকার গঠন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইমরানের পিটিআই জানায়, তারা কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিনের সঙ্গে জোট করবে।
দলটি খাইবার পাখতুনখোয়ায় জামায়াতে ইসলামীর (জেআই) সঙ্গে জোট সরকার গঠনের কথা জানিয়েছিল।
পরবর্তীতে জেআইয়ের লিয়াকত বালুচ জানায়, তার দল পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট গঠনে আগ্রহী নয়।
আজ আদিয়ালা কারাগারের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার গহর বলেন, ইমরান পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওমর আইয়ুব খানকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন।
এছাড়া, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে মিয়া আসলাম ইকবাল ও সালার কাকারকে মনোনীত করেছেন।
ব্যারিস্টার গহর বলেন, পিটিআই নেতা আসাদ কায়সারের ভাই আকিবুল্লাহ খানকে খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশের স্পিকার পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে পিটিআইয়ের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে।
ব্যারিস্টার গহর আরও বলেন, পিটিআই পিএমএল-এন, পিপিপি ও এমকিউএম-পির সঙ্গে কোনো রকম জোট করবে না।
তিনি বলেন, ইমরান খান পরিষ্কারভাবে বলেছেন, পিটিআইয়ের রাজনীতি ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য নয়, জনগণের জন্য।
তিনি আরও বলেন, পিটিআই জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করছে এবং তারা জনগণের ম্যান্ডেট ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তাই আমরা কোনো ক্ষমতার ভাগাভাগিতে বিশ্বাস করি না।
গহর বলেন, 'ন্যায়বিচার না পাওয়া আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তবে আমরা পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া ও কেন্দ্রে সরকার গঠনের কথা ভাবছি।
তিনি আরও জানান, তাদের সঙ্গে হওয়া 'অন্যায়ের' বিরুদ্ধে আগামী শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তারা দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করবে।
ব্যারিস্টার গহর ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধিতা করা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে; বিশেষত গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, জামায়াতে ইসলামী (জেআই), জমিয়ত-ই-উলেমা ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ), তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান ও আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির নাম নিয়ে তাদেরকে পিটিআইয়ের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
তিনি আরও বলেন, পিটিআই শনিবার বিকালে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করবে এবং জনগণকে এতে অংশ নেওয়ার আহ্বান অনুরোধ রইল।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আমাদের ম্যান্ডেট চুরি করতে দেবো না।
এক প্রশ্নের জবাবে গহর পিপিপির সঙ্গে আলোচনা এবং পিটিআই-সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এবং বিচার বিভাগকে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে দলের দায়ের করা আবেদনগুলো বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই কাজে বিলম্ব হলে 'বৃহত্তর ম্যান্ডেট' প্রভাবিত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব কায়সারের
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার আসাদ কায়সার বলেন, ইমরান তাকে নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধিতাকারী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার 'দায়িত্ব' দিয়েছেন। বিশেষ করে মাওলানা ফজলুর রেহমানের জেআইআই-এফ, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি ও কওমি ওয়াতান পার্টির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজ আদিয়ালা কারাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে এই পিটিআই নেতা বলেন, 'আমরা যৌথভাবে একটি কৌশল তৈরি করতে চাই। কারণ এটি ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন ছিল।'
এর একদিন আগেই ইমরানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন কায়সার।
আজ গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে কায়সার অভিযোগ করেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না।
তিনি বলেন, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারাদেশে এর (নির্বাচন) প্রতিবাদ করব এবং আমি নিজেই এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ী পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগ করবেন না এবং সংসদে বসবেন।
এই পিটিআই নেতা আরও বলেন, 'এক বা দুই দিনের মধ্যে' দলটি পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বার্তা
এদিকে সাবেক সিনেটর ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী সাইফ বলেন, সাধারণ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির বিষয়ে ইমরান খান একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিয়েছে অথবা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পাশে থেকেছে। আর এ ধরনের মানুষ গণতন্ত্রকে নিয়ে উপহাস করেছে।'
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে 'দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ও সবচেয়ে কারচুপির নির্বাচন' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইমরান খান এই বার্তা দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের নির্বাচনে কারচুপির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার অতীতের অপরাধ মুছে ফেলার সুযোগ পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে ইমরানের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার সাইফ বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার বিবৃতিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রেস ব্রিফিংয়ে ছিল। তাতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রতিক্রিয়া হলো, এ ধরনের মেকি বিবৃতি না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।'
সংক্ষেপিত অনুবাদ: তাবাসসুম সুইটি