এক্স-কে এখনও কেন টুইটার নামেই ডাকা হচ্ছে?
২০২৩ সালের ২৩ জুলাই মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এক্স। এই পরিবর্তনের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও প্ল্যাটফর্মটির ওয়েব ডোমেইন এখনও টুইটার ডটকম নামেই রয়েছে।
এমনকি এক্স ডটকমে ক্লিক করলেও সেটি পূর্বের টুইটার নামের মূল ডোমেইনে নিয়ে যায়। প্ল্যাটফর্মটির প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবারদের ইমেইলেও লেখা থাকে, "আপনার এক্স (প্রাক্তন টুইটার) সাবক্রিপশন জলদিই নবায়ন করা হবে।"
টুইটারের নাম ও লোগোতে পরিবর্তন আনার পরেও প্ল্যাটফর্মটি এখনও 'টুইটার ব্র্যান্ডকে বিদায়' করতে পারেনি। যদিও এর বর্তমান মালিক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক একটি টুইট বার্তায় এটিকে রি-ব্রান্ডিংয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিছু লোক (প্রধানত মাস্কের ভক্ত) এক্স নামটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ মানুষই তা মেনে নিতে পারেননি। সেক্ষেত্রে অনলাইন ও অফলাইন উভয় স্থানেই অনেকে এটিকে আগের টুইটার নামেই ডাকেন এবং পোস্টগুলিকে 'টুইট' নামে অভিহিত করেন। কেউবা আবার এক্স নাম বললেও বিভ্রান্তি এড়াতে সাথে প্রাক্তন টুইটার কথাটিও জুড়ে দেন।
এ বিষয়ে ব্র্যান্ড কনসালটেন্সি এজেন্সি উলফ ওলিন্সের গ্লোবাল প্রিন্সিপাল র্যামন জিমেনেজ বলেন, "পৃথিবীতে খুব অল্প সংখ্যক ব্র্যান্ডই রয়েছে যেগুলোর ব্র্যান্ড নামকে মানুষের আচরণের সাথে তুলনা করা হয়। যেমন, আমরা টুইট করি, গুগল করি, উবার করি ইত্যাদি।"
টুইটার অনলাইন জগৎ ও পপুলার সংস্কৃতির প্রতিটি অংশের সাথে মিশে আছে। ২০১১ সালে মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে 'টুইট' শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই বছরে সংক্ষিপ্ত অক্সফোর্ড ইংরেজি ডিকশনারিতে 'রিটুইট' শব্দটি যোগ করা হয়েছিল।
অনেকের জন্য টুইটার বড় ইভেন্টের পাশাপাশি বড় মাইলফলক সম্পর্কে নিজেদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করার জায়গা। এক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মটিতে নতুন চাকরি থেকে শুরু করে ব্যস্ততা এবং ভ্রমণ পর্যন্ত বহু ধরনের আপডেটই দেওয়া হয়। আর সাংবাদিকদের জন্য প্ল্যাটফর্মটি বৃহৎ সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর একটি বড় উপায়।
লেখক, ব্র্যান্ড প্রশিক্ষক এবং লিকুইড এজেন্সির ট্রান্সফরমেশন ডিরেক্টর মার্টি নিউমেয়ার বলেন, "টুইটার নামটি ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে।"
গতবছরের শুরুর দিকে প্ল্যাটফর্মটির মূল কোম্পানি টুইটার ইনক-কে এক্স কর্পোরেশন নামে পরিবর্তন করা হয়। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেরও বেশি সময় পর মাস্ক জানায়, প্ল্যাটফর্মটিকে এক্স নামে রি-ব্র্যান্ডিং করার সময় এসেছে।
সাংবাদিক জো শিফার জানান, কয়েক দশক আগে থেকেই মাস্কের 'এক্স' নামের ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তিনি তার প্রথম স্টার্টআপের নাম 'এক্স' রাখতে চেয়েছিলেন; যা তার সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। তিনি তার এক ছেলের নামও রেখেছেন এক্স।
শিফার বলেন, "যে মুহূর্ত থেকে মাস্ক টুইটার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিনি তখন থেকেই তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বলতে শুরু করেছেন যে, তিনি এক্স ডটকম রি-ব্র্যান্ডিং করতে চান।"
টুইটারের রি-ব্র্যান্ডিংয়ের আগে অবশ্য মাস্ক ঘোষণা করেছিলেন যে, এটিকে তিনি একটি 'এভ্রিথিং অ্যাপ' এ রুপান্তর করতে চান। এক্ষেত্রে ব্লু সাবস্ক্রাইবারদের জন্য ঘণ্টার বেশি সময়ের ভিডিও ছাড়ার সুবিধা এবং সরাসরি ভয়েজ মেমোজ পাঠানোর সুবিধা রাখা হয়। তবে তখন ঠিক বুঝা যাচ্ছিল না যে, মাস্ক ঠিক কী করতে চলছেন।
এক্ষেত্রে টুইটার রি-ব্র্যান্ডিংয়ের করার ক্ষেত্রেও বেশ অস্পষ্টতা ছিল। কেননা প্রথমে আচমকা লোগো পরিবর্তন করা হলেও ওয়েবসাইটের বাকি অংশ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপডেট করা হয়নি। এমনকি 'টুইট', 'রিটুইট' এবং 'কোট টুইট' শব্দগুলি রি-ব্র্যান্ডিংয়ের কয়েকদিন পরেও সাইটটিতে ছিল।
যদিও টুইটার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রি-ব্র্যান্ড করা প্রথম বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নয়। কেননা গুগল ও ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাক্রমে অ্যালফাবেট এবং মেটাতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, টুইটারের ক্ষেত্রে সমস্যাটি ছিল, অনেক ব্যবহারকারী বুঝতে পারেননি যে, কেন টুইটারকে রি-ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। আর এই জন্যই তাদের পক্ষে প্ল্যাটফর্মটিকে 'এক্স' নামে বিবেচনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শিফার মনে করেন, মূল প্ল্যাটফর্মটি সত্যিই খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি।
যদিও মাস্কের ভক্তরা টুইটারের রি-ব্র্যান্ডিংয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিল। এছাড়াও অনেক প্রাক্তন কর্মীও এই ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কেননা তাদের মতে, সময়ের পরিক্রমায় কোম্পানিটির মাঝে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল।
ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করা ল্যান্ডরের গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইনোভেশন ডিরেক্টর জেমস উইথে বলেন, "নতুন নামটি খুব একটা কাজে আসছে না। এটি শুধু একটি বর্ণ। এটি টুইটারের মতো ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করছে না। 'এক্স' বর্ণটিকে ক্রিয়া হিসাবেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।"
এদিকে রি-ব্র্যান্ডের পর থেকে কিছু এক্স ব্যবহারকারী প্ল্যাটফর্মের প্রাক্তন ব্র্যান্ডিংয়ের পক্ষে সোচ্চার হচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মটির একটি পোলে দেখা যায়, ৩৩ হাজার ভোটের মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ ভোট টুইটার নামের পক্ষে ছিল। এছাড়াও অনেকেই 'আই স্টিল কল ইট টুইটার' সম্বলিত টি-শার্ট তৈরি করেছেন।
আর রেডিটে টুইটারের ভক্তদের একটা অংশ এক্স নামের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রি-ব্র্যান্ড ঘোষণার পরে এক ব্যবহারকারী জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, একটি পুরো প্রজন্ম নতুন ব্র্যান্ডিং প্রতিরোধ করার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে কি-না!
নিউমিয়ার বলেন, "আপনাকে মনে রাখতে হবে ব্র্যান্ড বলতে আসলে কী বুঝায়। এটি হচ্ছে প্রোডাক্ট, সেবা কিংবা কোম্পানিটি সম্পর্কে গ্রাহকদের অনুভূতি। সুতরাং, ব্র্যান্ড সেটিই যা গ্রাহকেরা বলবে। এক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নয় যে, গ্রাহকরা এটিকে টুইটার বলা বন্ধ করতে পারবেন না। বরং তারা এটি ইচ্ছা করেই বলা বন্ধ করবে না।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান