ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য বাড়ছে: গবেষণা
ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা দল জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষার্ধে ভারতে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ঘৃণামূলক মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইন্ডিয়া হেট ল্যাব নামের গবেষণা দলটি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা ২০২৩ সালে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ৬৬৮টি ঘৃণাত্মক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে ২৫৫টি ঘটনা বছরের প্রথমার্ধে ঘটেছে এবং বাকি ৪১৩টি বছরের শেষ ছয় মাসে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পরিমাণ প্রায় ৬২ শতাংশ বেশি। আর শেষ তিন মাসে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী বক্তেব্যের পরিমাণ বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে গবেষকরা ইসরায়েল-গাজা সংঘাতকে দায়ী করেছেন।
এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ বা ৪৯৮টি ঘটনা ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত রাজ্যগুলোতে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণামূলক বক্তব্য এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হামাস যখন ইসরায়েলে হামলা চালায়, তখন ইসরায়েলের পালটা হামলায় গাজা উপত্যকায় সংঘাত শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ৪১টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটে। যা ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে নথিভুক্ত বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রায় ২০ শতাংশ।
গবেষণা দলটি জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুসারে ধর্ম, জাতিগততা, জাতীয়তা, জাতি বা লিঙ্গের মতো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ঘৃণাত্মক বক্তব্যগুলোকে নিরূপণ ও সংজ্ঞায়িত করেছে।
এদিক, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদি সরকার মুসলিমদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছে এবং তারা ধারণা করছে এ আচরণ ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরও অব্যাহত থাকবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বেশ কিছু বিতর্কিত নীতি ও পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ভারতে প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের অধীনে মুসলমানদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন। যাকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর 'মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক' বলে সমালোচনা করেছে। ধর্মান্তর-বিরোধী আইন যেটি সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করা হয়েছে এবং ২০১৯ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল আইন।
এছাড়া, অবৈধ নির্মাণ অপসারণের নামে মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংস এবং রাজ্যে বিজেপি শাসনের সময় কর্ণাটকের শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর চলমান উদ্বেগকে বাড়িয়েছে। এরূপ আচরণের সত্ত্বেও, মোদির সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগকে অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে তার নীতিগুলোর মূল লক্ষ্য সমস্ত ভারতীয়কে উপকৃত করা।
ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন