ইয়েমেন উপকূলে হুথিদের হামলার শিকার ব্রিটিশ মালিকানাধীন জাহাজ ডুবে গেছে
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর ব্রিটিশ নিবন্ধিত একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেছে, জাহাজটির নাম 'রূবিমার'। ইয়েমেন সরকার জানিয়েছে, ডুবে যাওয়ার আগে কয়েকদিন ধরে জাহাজটি এডেন উপসাগরে ভাসছিল এবং এর ভেতরে পানি ঢুকছিল।
ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করার পর এটিই প্রথম কোনো জাহাজ ডুবির ঘটনা।
জাহাজটি সার বহন করছিল বলে জানা গেছে এবং ডুবে যাওয়ায় এটি পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাব আল-মান্দাব প্রণালির কাছে এডেন উপসাগরে হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রুবিমার জাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। দশ দিন আগে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছিল, জাহাজটি পানিতে ভাসছে এবং এর ২৪ জন ক্রুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি বিবিসির হাতে আসা একটি ছবিতে দেখা যায়, জাহাজটির সামনের অংশ ডুবে গেলেও পানিতে ভাসছিল তখন।
জাহাজটির মালিকরা সে সময় বলেছিলেন, জাহাজটিকে নিকটবর্তী জিবুতিতে নিয়ে যাওয়া হবে তবে তাও ডুবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জাহাজটিতে কেউ ছিল না কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।
১৭২ মিটার লম্বা জাহাজটিতে বেলিজের পতাকা টাঙানো ছিল এবং লেবাননের একটি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হতো। জাহাজটির মূল মালিকানা গোল্ডেন অ্যাডভেঞ্চার শিপিং কোম্পানির। নিবন্ধনে তাদের ব্রিটিশ বন্দর সাউদাম্পটনের একটি ঠিকানা দেওয়া আছে।
জাহাজটি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সারের একটি কার্গো বহন করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইয়েমেনের স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আওয়াদ বিন মুবারক জাহাজডুবির ঘটনাকে 'নজিরবিহীন পরিবেশগত বিপর্যয়' বলে অভিহিত করেছেন।
গ্রিনপিস বলেছে, ছড়িয়ে পড়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দক্ষিণ লোহিত সাগরের প্রবাল প্রাচীর, উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ এবং বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবন, মোটকথা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ সতর্ক করে দিয়েছে যে প্রচুর পরিমাণে সার ছড়িয়ে পড়ার ফলে শৈবালগুলো অত্যধিক বৃদ্ধি পেতে পারে, যার কারণে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়ে সামুদ্রিক জীবনের বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বিভাগের প্রধান আলী আল-সাওয়ালমিহ বলেছেন 'একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কৌশল পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি এখন'।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে, হুথি নেতা মোহাম্মদ আলী আল-হুথি বলেছেন যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং যুক্তরাজ্য সরকারের সুযোগ ছিল গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে অনুমতি দিয়ে রুবিমারকে রক্ষা করার।
গত নভেম্বর থেকে হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে।
ইয়েমেনের অভ্যন্তরে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একের পর এক হামলা চালিয়েছে। শনিবার যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড বডি ইউকেএমটিও ইয়েমেনের মোখা বন্দরের পশ্চিমে একটি জাহাজে হামলার খবর পায়। ক্রুরা জাহাজটি নোঙর করতে সক্ষম হয়েছিল এবং সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের সরিয়ে নেয়।
উপরন্তু, ইউকেএমটিও রুবিমারকে যেখানে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল সেখানে আরও একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ হতে যাওয়া হুথিদের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে তারা আত্মরক্ষার্থেই হামলা চালিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মার্কিন বিমানের জন্য হুমকি ছিল বলে জানিয়েছে সেন্ট্রাল কমান্ড।
একই দিন ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ লোহিত সাগরে তাদের দিকে উড়ে আসা একটি ড্রোনকেও গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার ফলে অসংখ্য শিপিং কোম্পানি আল-মান্দাব প্রণালির এই পথ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যের প্রায় ১২% পরিবহণ হতো।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌ জোটের হুথি লক্ষ্যবস্তুতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিমান হামলা সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা এখনও উল্লেখযোগ্য হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগর এলাকায় জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন