মদ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল
ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আর্থিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে নিজ বাসভবন থেকে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভারতের ইতিহাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা অবস্থায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গ্রেপ্তার হলেন কেজরিওয়াল। এর আগে ঝাড়খণ্ড প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেপ্তার করে ইডি। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে হেমন্ত পদত্যাগ করেছিলেন।
গ্রেপ্তারের ফলে আম আদমিপ্রধানকে জেলে যেতে হবে। দুই বছর আগে কেজরিওয়ালের সহকারীদেরও একই মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল। এই গ্রেপ্তারকে তার দল 'নোংরা রাজনীতি' বলেছে।
আম আদমি পার্টি অবশ্য বলছে, জেল থেকেই সরকার চালাবেন কেজরিওয়াল। দিল্লির অর্থমন্ত্রী ও আদমি পার্টির নেতা অতিশি বলেন, 'আমরা বরাবর বলে এসেছি যে জেল থেকেই সরকার চালাবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন।'
আম আদমি পার্টি বলছে, দেশে লোকসভা নির্বাচনের আগে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার একটি ষড়যন্ত্র।
গতকাল কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের সময় তার বাসার সামনে অসংখ্য সমর্থক হাজির হন।
২০২২ সালে দিল্লি সরকারের বাস্তবায়ন করা মদ নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে ইডি। অভিযোগ উঠেছিল, ওই নীতিতে বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, ওই নীতি প্রণয়নের জন্য যেসব ব্যবসায়ী ঘুষ দিয়েছিলেন, তাদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল। যদিও পরে ওই নীতি বাতিল করা হয়।
আম আদমি বলেছে, তদন্তে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেজরিওয়াল এর আগে বলেছেন, তিনি যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, 'তাহলে দুনিয়ায় কোনো সৎ মানুষ নেই'।
মদ নীতির ওই মামলায় কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নয়বার সমন জারি করেছিল ইডি। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় কোনো সমনেরই জবাব দেননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হলে নির্বাচনে তার দল দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু হাইকোর্ট তাকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবভ দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্টে যান কেজরিওয়াল। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টও কেজরিওয়ালকে কোনো সুরক্ষা দেওয়ার কথা দেননি।
হাইকোর্ট রক্ষাকবচ না দেওয়ার পরই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয় ইডি।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের খবর বিরোধী দলগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, 'নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
আসন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ২৭ দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট 'ইনডিয়া'র অন্তর্ভুক্ত আম আদমি পার্টি।
যে মামলায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো
মামলাটি ২০২১-২২ সালের জন্য দিল্লি সরকারের আবগারি নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ সম্পর্কিত। পরে ওই নিতিটি বাতিল করা হয়েছিল।
ইডির দাবি, আবগারি নীতিতে আম আদমি পার্টির নেতারা ১০০ কোটি রুপির ঘুষ পেয়েছেন। ইডির পেশ করা চার্জশিটে একাধিকবার কেজরিওয়ালের নামও রয়েছে।
ইডি অভিযোগ করেছে, অভিযুক্তরা আবগারি নীতি প্রণয়নের জন্য কেজরিওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিং ইতিমধ্যে এই মামলায় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
কেজরিওয়াল গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে ইডির জারি করা আটটি সমন এড়িয়ে যান এবং একে 'অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে অভিহিত করেন।
ইডির দাবি, দিল্লির আবগারি নীতি নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়া, কে কবিতাসহ (গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার) অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা ষড়যন্ত্র করেছেন। ব্যবসায়ী শরৎ রেড্ডি, মাগুন্তা শ্রীনিবাসুলু রেড্ডি ও কে কবিতার সমন্বয়ে গঠিত একটি দক্ষিণ গোষ্ঠী আবগারি নীতি ২০২১-২২-এর অধীনে দিল্লিতে ৩২টির মধ্যে নয়টি অঞ্চল পেয়েছে। পাইকারি বিক্রেতাদের জন্য অস্বাভাবিক উচ্চ ১২ শতাংশ লাভের মার্জিন এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য প্রায় ১৮৫ শতাংশ লাভের মার্জিন নিয়ে নীতিটি আনা হয়েছিল। ইডির অভিযোগ, ১২ শতাংশ মার্জিনের মধ্যে ৬ শতাংশ পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে আপ নেতাদের ঘুষ হিসেবে আদায় করা হয়েছিল।