জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বাড়ছে চকলেটের দাম
এ বছর ইস্টার এগের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এর পেছনের একাধিক কারণের মধ্যে একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পশ্চিম আফ্রিকায় কোকো উৎপাদন কমে যাওয়া।
বেশিরভাগ চকলেট পশ্চিম আফ্রিকায় জন্মানো কোকো থেকে তৈরি হয়। কিন্তু আর্দ্র তাপপ্রবাহের কারণে এবার এ ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে কোকো গাছ।
কোকোর ঘাটতির কারণে বেশকিছু জনপ্রিয় ইস্টার এগের দাম ৫০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, মানবসৃষ্ট এ জলবায়ু পরিবর্তন চরম তাপমাত্রাকে প্রায় ১০ গুণ বাড়িয়ে তুলছে।
দ্য ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোকোর দাম ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকে দ্বিগুণ হয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
কোকোর বেশিরভাগ উৎপাদন হয় পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র কৃষকদের হাতে। ঘানা এবং আইভরি কোস্টে এটির বৈশ্বিক ফলনের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয়। গত মৌসুমে এল নিনোর কারণে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ফলে এ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২৩ সালে আইভরি কোস্ট ও ঘানা থেকে যুক্তরাজ্যে ১২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রায় পাঁচ কোটি আশি লাখ কিলোগ্রাম কোকো বীজ আমদানি করা হয়।
তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে তীব্র খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় আইভরি কোস্ট এবং ঘানাসহ বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা রেকর্ড ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছিল।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, আইভরি কোস্টের কৃষকেরা জানিয়েছেন, উচ্চ তাপ কোকোর ফলন দুর্বল করে দিয়েছে। বাষ্পীভবনের হার বাড়ায় ফসল পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পাচ্ছে না।
কোকোর ওপর এল নিনোর ধাক্কা
স্প্যানিশ শব্দ 'এল নিনো'র অর্থ হলো 'লিটল বয়' বা 'ছোট ছেলে'। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকাকে এল নিনো বলা হয়। প্রতি তিন থেকে সাত বছরে এল নিনো ঘটে।
গত জুন থেকে একটি শক্তিশালী এল নিনো সক্রিয় রয়েছে। এই এল নিনোর কারণে এ বছর কোকো খামারগুলোতে মারাত্মক খরা দেখা দিয়েছে, উৎপাদন আরও কমে গেছে।
ইউরোপভিত্তিক ব্যাংক আইএনজি'র অনুমান, এ বছর কোকোর বৈশ্বিক উৎপাদন এবং ভোগের মধ্যকার ব্যবধান ২০১৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় হবে।
চকলেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো সাধারণত কয়েক মাস আগে থেকে কোকো বীজ কিনে রাখে। তবে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ার আঁচ এখন টের পাচ্ছেন দোকানের খুচরা পর্যায়ের চকলেট ক্রেতারা।
চকলেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডট অ্যান্ড স্প্রুয়েংলি'র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা মার্টিন হাগ সম্প্রতি বলেন, 'অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে চকলেটের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আমরাও এ দলের অংশ।'
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন চকোলেট নির্মাতা কোম্পানি হার্শে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, কোকোর ক্রমবর্ধমান দাম চকলেটের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।