প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্টে ভরপুর এক্স: না চাইলেও দেখতে হচ্ছে ব্যবহারকারীকে
রেডিট ব্যবহারকারীরা 'এনএসএফডব্লিউ' ট্যাগ শব্দটির সঙ্গে বেশ পরিচিত; নট সেফ ফর ওয়ার্ক — অ্যাডাল্ট কোনো কনটেন্ট সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার জন্য এ ট্যাগটি পোস্টে ব্যবহার করা যায়। তাই হুটহাট করে আশপাশে কেউ এসে পড়লেও বিব্রত হওয়ার ভয় থাকে না।
কিন্তু এক্স তথা অধুনালুপ্ত টুইটার যেন এ বিষয়ে রেডিটের মতো 'একসেন্ট্রিক' সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। দীর্ঘ ১৮ বছরের পুরোনো এ মূলধারার সোশ্যাল মিডিয়াটি ইলন মাস্কের অধীনে 'বাকস্বাধীনতা'কে বল্গাহীন করে দেওয়ায় সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আর আগের মতো নেই।
হালের এক্স-এর অনেক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে গেলেই ব্যবহারকারীরা অপ্রত্যাশিত সব অ্যাডাল্ট ছবি আর লিংকের দেখা পাবেন। যেগুলোর সঙ্গে মূল পোস্টের দূরতম সম্পর্কও থাকে না। এসব কনটেন্টের সঙ্গে বেশিরভাগ সময়ই জুড়ে দেওয়া হয় অনলিফ্যানস-এর মতো পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মের লিংক। সেই সঙ্গে ভুয়া আর বিপজ্জনক লিংক তো আছেই।
মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এক্স থেকে কনটেন্ট মডারেশন উঠে যাওয়ার পর থেকে এ প্ল্যাটফর্মটির পটভূমিই বদলে গেছে। এটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিস্তৃত ক্রমাবনতির একটি লক্ষণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক্স-এর এ পতনের জন্য অনেকেই একবাক্যে বর্তমান মালিক ইলন মাস্ককে দোষারোপ করবেন। কিন্তু মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক জেসমিন এনবার্গ বলেন, আগের মালিকদের সময় থেকেই নেতিবাচক যাত্রা শুরু হয়েছিল টুইটারের।
'মাস্ক এমন এক সময় টুইটার অধিগ্রহণ করেছিলেন যখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে প্রাণ ছিল না। ওই সময়ে কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে খরচ কমাতে শুরু করে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মগুলোতে অর্থব্যয় কমিয়ে দেয়। টুইটারের ক্ষেত্রে দুটোই ঘটেছিল।'
এনবার্গের মতে, টুইটার থেকে বিদায় নেওয়ার কারণ বিজ্ঞাপনদাতাদের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন খোদ ইলন মাস্ক। 'গত কয়েক মাসে এ বিষয়টি আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,' বলেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস্ক টুইটারের ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি কাউন্সিল বাতিল করে দেন এবং কনটেন্ট মডারেশনের দায়িত্ব থাকা কর্মীদের অনেককেই ছাঁটাই করেন। এ দুটোই বিজ্ঞাপনদাতা ও ব্যবহারকারী উভয়ের জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে নিরাপদ রাখার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেন এনবার্গ।
এদিকে অপতথ্য ও বট অ্যাকাউন্টের দিক থেকেও টুইটারের সুখ্যাতি কখনো ছিল না। তারপরও বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটারের ওপর দীর্ঘসময় আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু শেষতক তারা আর টুইটারের ওপর ভরসা করতে পারছেন না।
কনটেন্ট মডারেশন বন্ধ, কিন্তু পেইড ব্যবহারকারীদের জন্য প্রোফাইল বুস্টিংয়ের সুবিধা; এ দুইয়ের কাকতালীয় সম্মিলনের ফলে সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন পর্নোগ্রাফিক সেবাদাতারা। তাদের তৈরি বটগুলো এর ফলে সহজেই টুইটারের মূলস্রোতে মিশে যেত পারছে বর্তমানে।
২০২৩ সালে এক্স-এর বিজ্ঞাপন থেকে আয় ৫৪ শতাংশ কমেছে। 'এক্স-এ এখন এমন সব প্রশ্নজাগানিয়া বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো খুব সহজেই প্ল্যাটফর্মটিতে ফিরে আসবে না,' বলেন এনবার্গ।
ইলন ইঙ্ক পডকাস্ট-এর বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলেছে, সেক্ষেত্রে যৌনতা বিষয়ক এসব কনটেন্টকে কেন্দ্র করেই এক্স হয়তো আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাইবে।
ব্লুমবার্গ-এর খবর অনুযায়ী, এক্স বর্তমানে এমন একটি ফিচার পরীক্ষা করছে যেখানে ব্যবহারকারীরা 'অ্যাডাল্ট কনটেন্ট'কেন্দ্রিক বিভিন্ন কমিউনিটিতে যুক্ত হতে পারবেন বা চাইলে নিজেরাও তৈরি করতে পারবেন।
কমিউনটি তৈরি করে ব্যবহারকারী সেগুলোকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উল্লেখ করে সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দিতে পারবেন। কেউ যদি এ ধরনের কমিউনটিতে অ্যাডাল্ট লেবেল না লাগান, সেক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মটি কিছু কনটেন্ট সরিয়ে নিতে পারবে।
এ ধরনের 'এনএসএফডব্লিউ' গ্রুপ তৈরি মূলধারার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেদের আলাদা করার এক্স-এর একটি প্রচেষ্টা হতে পারে। ইলন মাস্কের মালিকানায় আসার আগে থেকেই টুইটারে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট ছিল, তবে এখনকার মতো এতটা সহজলভ্যভাবে নয়।
টুইটারের সাবেক কর্মকর্তারা অনলিফ্যানস-এর মতো সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সুবিধা চালু করারও পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু 'ক্ষতিকর যৌনতাধর্মী আধেয়'র ওপর নজর রাখার জন্য টু্ইটার প্রস্তুত নয় এমন সিদ্ধান্তের পর ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি।
ইলন মাস্ক বিশ্বাস করেন, অবৈধ নয় এমন সব ধরনের কনটেন্টই এক্স-এ থাকা উচিত। সেজন্য সাধারণ ব্যবহারকারীরাও নিয়মিত খুব বেশি পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেখছেন প্ল্যাটফর্মটিতে। অনেক সময়ই এগুলো তারা নিজেদের অনিচ্ছায় দেখতে বাধ্য হন।
মাস্কের অধিগ্রহণের আগেও এটি টু্ইটারের একটি সমস্যা ছিল, কিন্তু পর্নোগ্রাফিক স্প্যামবটের কারণে বর্তমানে এ ধরনের কনটেন্টের হার অনেক বেড়ে গিয়েছে।