বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শিয়াল একসময় কি মানুষের পরম বন্ধু ছিল?
আমাদের পূর্বপুরুষরা সম্ভবত কুকুরকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে পোষ মানানোর অনেক আগে থেকেই শিয়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে সঙ্গে রাখতেন। খবর বিবিসির
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন মানব সমাজগুলো শিয়ালকে এতটাই শ্রদ্ধা করতেন যে পোষা শিয়ালকে তাদের পাশে সমাধিস্থ করা হত।
আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়ায় দেড় হাজার বছর আগের একটি শিয়ালকে মানুষের সঙ্গে কবরে সমাহিত করতে দেখে অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা মনে করেন, এসব ঘটনার সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো শিয়ালটি অত্যন্ত প্রিয় সহচর বা পোষা প্রাণী ছিল।
ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রাণীটি প্রাগৈতিহাসিক শিকারী সমাজের মানুষের সঙ্গে খাবার খেয়েছিল এবং শিবিরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে থাকত।
প্রায় এক দশক আগে আর্জেন্টিনার আরেক অংশে অনেক পুরনো একটি কবরে একই প্রজাতির একটি শিয়ালের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। এটিও সম্ভবত পোষা প্রাণী ছিল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অফেলি লেব্রাসেউর বলেন, 'শিকারী সমাজের মানুষদের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এই ধরনের শিয়ালের সন্ধান পাওয়াও একটি বিরল আবিষ্কার।'
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি এদের সঙ্গে মানুষের সাহচর্যের সম্পর্ক ছিল।'
শিয়ালটি আর্জেন্টিনার কানাদা সেকার সমাধিস্থলে পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে একসময় শিকারী সমাজের মানুষেরা বাস করত।
আর্জেন্টিনা ও পেরুজুড়ে প্রাচীন মানব সমাধিস্থলে বন্য শিয়ালের দাঁত পাওয়া গেছে। এর ফলে বোঝা যায়, ওই সমাজের মানুষের মধ্যে প্রাণীটির প্রতীকী তাৎপর্য ছিল।
তবে মানুষের কবরে শিয়ালের প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল আবিষ্কারের ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডে অত্যন্ত বিরল।
আর্জেন্টিনা এবং পেরুজুড়ে প্রাচীন মানব সমাধিস্থলে বন্য শিয়ালের দাঁত পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে প্রাণীটির প্রতীকী তাৎপর্য ছিল।
কিন্তু মানুষের কবরে শিয়ালের প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল আবিষ্কারের ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডে অত্যন্ত বিরল।
মাঝারি আকারের শিয়ালটির বৈজ্ঞানিক নাম 'দুসিয়ন আভাস'। এর ওজন ছিল ১০-১৫ কেজি।
পাতাগোনিয়ায় গৃহপালিত কুকুরের আগমনের কয়েকশো' বছর পরে প্রায় ৫০০ বছর আগে এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আর্জেন্টিনার মেন্ডোজার ইনস্টিটিউট অব ইভোলিউশনের ড. সিনথিয়া অ্যাবোনার সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয় এবং রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি