ইরান ৩৫০ মিসাইল ও ড্রোন ছুড়েছে, অধিকাংশই ঠেকানো হয়েছে: ইসরায়েলের দাবি
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ৩৫০-র বেশি ড্রোন ও মিসাইল ছুড়েছে। এসব ড্রোন ও মিসাইলের অধিকাংশই ঠেকানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এছাড়া ইরানের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি সেনাঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত ও ১০ বছর বয়সি এক মী গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে।
ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জর্ডানও ইরানের ড্রোন ঠেকিয়েছে।
ইরানের হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া ইরানের হামলা নিয়ে জি৭-ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বাইডেন।
এদিকে ইসরায়েলের অনুরোধে রোববার (১৪ এপ্রিল) জরুরি অধিবেশন ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
এর আগে রোববার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ড্রোন হামলা চালায় ইরান। দুই দেশের মধ্যে হুদিনের বৈরিতা থাকলেও এবারই প্রথম সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাল তেহরান।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর খবরে বলা হয়েছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ড্রোনগুলো স্থানীয় সময় রোববার রাত ২টায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে। ইসরায়েলি বাহিনীগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সব 'লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণ করছে' বলেও জানিয়েছে এটি।
এদিকে আরেক ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, ড্রোনের পাশাপাশি ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্রুজ মিসাইলও নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলি একটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ইরান সম্ভবত ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে।
এবিসি নিউজকে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইরান ৪০০–৫০০ ড্রোন ও মিসাইল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইরানের ছোঁড়া দুই শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, ইসরায়েল ও অন্য কয়েকটি দেশ মিলে কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গতিরোধ করেছে, যার বেশিরভাগ হয়েছে ইসরায়েলের আকাশসীমার বাইরে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানান, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করেছে এবং একটি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পুরো ইসরায়েল জুড়ে সাইরেনের শব্দের পাশাপাশি জেরুসালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একই সাথে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু বস্তুকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন: 'খল জায়োনিস্ট রেজিমকে শাস্তি দেওয়া হবে।'
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে সন্দেহজনক ইসরায়েলি বোমা হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত কর্মকর্তা নিহত হন। তাদের মধ্যে দুজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারও ছিলেন।
ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান।
হামলার পর জর্ডান, ইরাক, মিশর, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইরানের ড্রোন উড্ডয়নের খবর প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশের 'প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাসমূহ' মোতায়েন করা হয়েছে।
'আমরা রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েল রাষ্ট্র শক্তিশালী রাষ্ট্র। আইডিএফ শক্তিশালী বাহিনী। ইসরায়েলের জনগণ শক্তিশালী।
'যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য অনেক দেশ ইসরায়েলের পাশে থাকার জন্য আমার ধন্যবাদ জানাই,' বলেন তিনি।
হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওয়ার ক্যাবিনেট ও সিকিউরটি ক্যাবিনেটের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।