আগামী সপ্তাহেই রাশিয়া থেকে সুখোই এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান পেতে পারে ইরান
চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের জন্য দুশ্চিন্তা যেন আরও বাড়িয়ে দিল ইরান। শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে বহুল প্রতীক্ষিত চতুর্থ প্লাস প্রজন্মের অত্যাধুনিক সুখোই এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে ইরান।
ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানের প্রথম চালানটি আগামী সপ্তাহে তেহরানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রথম চালানে ঠিক কতটি যুদ্ধবিমান আসবে প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে সব মিলিয়ে অন্তত ২৪টি যুদ্ধবিমান থাকতে পারে।
গত বছর চতুর্থ প্লাস প্রজন্মের অত্যাধুনিক সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে রাশিয়ার সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করে ইরান। এ চুক্তির আওতায়, মিল এমআই-২৮ অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ ও লাইট অ্যাটাক বিমানও কেনার কথাও জানা গিয়েছিল। ওই সময় দেশটির বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ, ইরানের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করে।
গত বছর একজন ইরানি সাংবাদিক দাবি করেন ২০২১ সালে ৫০টি এসইউ-৩৫ বিমানের জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করে ইরান। যদিও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কথা বিবেচনা করে রাশিয়া শীঘ্রই এতগুলো সরবরাহ করতে পারে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
গত শনিবারের ইরানি গণমাধ্যমের খবরে কুয়েতের আল-জারিদা পত্রিকার একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনেরও উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ইরান কিছু এসইউ-৩৫ পেয়েছে বলে ধারণা করা হলেও রাশিয়া প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার ওপর ইসরায়েল ও আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর চাপের কারণে এই সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন, ইসরায়েলের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলা থেকে তার আকাশসীমা রক্ষার জন্য এসইউ-৩৫ এর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইরানের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রয়োজন।
তবে আল-জারিদার এ দাবি কতটুকু সত্য তা এখনও নিশ্চিত নয়। ইরান কোনো এসইউ-৩৫ পেয়েছে এমন কোনো ছবি বা স্যাটেলাইট ছবির মতো দৃশ্যমান কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০২৩ সালে তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে ভূগর্ভস্থ ইরানের একটি বিমানঘাঁটির বাইরে একটি পূর্ণমাত্রার এসইউ-৩৫ মকআপ (প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত রেপ্লিকা বিমান) দেখা গেছে।
যদি ইরানি গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সঠিক হয় এবং এসইউ-৩৫ বিমানগুলো সত্যিই ইরানে পৌঁছায়, তবে এটি প্রমাণ করবে যে রাশিয়া তার নিজের আঞ্চলিক সামরিক সংঘাতের মধ্যেও তার চুক্তি পূরণে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উপরন্তু, রাশিয়া এবং ইরান যে ২০২২ সাল থেকে তাদের সামরিক সম্পর্ক জোরদার করছে এটিরও ইঙ্গিত দেবে।
উল্লেখ্য, ইরানের কাছে কেবল কয়েক ডজন সক্রিয় আক্রমণকারী বিমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেমন আছে রুশ যুদ্ধবিমান, তেমনি ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা কিছু পুরোনো মার্কিন বিমানও রয়েছে।
আইআইএসএস-এর তথ্যমতে, তেহরানের সংগ্রহে রয়েছে ৯টি এফ-৪ ও এফ-৫ যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন, রাশিয়ার সুখোই-২৪-এর একটি স্কোয়াড্রন ও কয়েকটি মিগ-২৯, এফ-৭ ও এফ-১৪ যুদ্ধবিমান।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা মারা যান। এ হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করছিল। দামেস্কের সেই আক্রমণের জবাবে ইসরায়েলে অভূতপূর্ব ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে তেহরান। তারই জবাবে ইসরায়েল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
আক্রমণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইসফাহান অঞ্চলে। হামলার মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে একেক রকম দাবি করা হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে তেহরান।
তবে হামলা পরবর্তী স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, হামলায় ইসফাহানের অষ্টম শেকারি বিমান ঘাঁটিতে ইরানের এস-৩০০ পিএমইউ-২ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার রাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েল বুঝাতে চেয়েছে, তারা যদি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ইরানের সবচেয়ে অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকেজো করে দেয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আবদুল্লাহিয়ানের বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, ইরান পালটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চাপ অনুভব করা এড়াতে আক্রমণটির তাৎপর্য হ্রাস করার চেষ্টা করছে।
আর ইসফাহান হামলার পরপরই যদি ইরান অত্যাধুনিক এসইউ-৩৫ পায়, তবে এটি ইরানের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। গত কয়েক দশকের মধ্যে ইরানের প্রথম বড় ধরনের যুদ্ধবিমানের চালান হবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের বার্তা দেবে এটি।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন