প্রতিবাদ চলবেই: গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অটল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
গণগ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
গত সপ্তাহে কলম্বিয়ার বিক্ষোভ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ইয়েল ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিক্ষোভের কারণে বহু শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন।
এদিকে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাদের হয়রানির অভিযোগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে আন্দোলনকারীরে সরে যেতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। পরে সময়সীমা আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনায় 'গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি' হয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. নেমাত শফিক এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন যে আগামী ৬ মে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তাকে কোনো বিকল্প বিবেচনা করতে হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভকারীরা পুরো এলাকায় ফিলিস্তিনের পতাকা ও 'সত্যিকারের আমেরিকানরা গাজার পাশে', 'গাজায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অবশিষ্ট নেই' ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। সেই সঙ্গে তারা 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' বলেও স্লোগান দিতে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ইয়েল, এমারসন ও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের 'দখলদারিত্ব' থেকে লাভবান এমন সব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক প্রত্যাহারের জন্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতি, ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান বন্ধ, নিউ ইয়র্ক পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে (যেমন- তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়) সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বানও জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের একজন ও প্যালেস্টাইন স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সদস্য বাসিল বিবিসিকে বলেন, "আমরা শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। এটা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব [বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে] যেসব কোম্পানিতে তারা বিনিয়োগ করেছে তা থেকে সরে আসা।... এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক... এটি শেষ হবে।"
বিক্ষোভের জেরে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, বিক্ষোভ থেকে তাদের সাধারণ ক্ষমার দাবিও জানানো হয়েছে।
ইরালিসা নামে আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা 'অবস্থান করবেন'।
এদিকে কয়েকজন ইহুদি শিক্ষার্থী ও অনুষদের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে বিক্ষোভকারীরা তাদের হয়রানি করেছেন।
মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ এ ঘটনার জেরে বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা 'এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যা ইহুদি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য অনিরাপদ'।
তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, তারা কাউকে হয়রানি করেননি।
মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা কলম্বিয়া এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের জন্য 'বাইরের আন্দোলনকারীদের' দোষারোপ করেন।
তারা বলছেন, এটি 'শহরে সহিংসতা সৃষ্টির সুযোগ হিসেবে ব্যবহারে চেষ্টা করা হচ্ছে'।
মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের বাইরেও গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে অনেকেই বিক্ষোভ করেছেন।
বাসিল বলেন, ক্যাম্পাসে বাইরে প্রতিবাদ করে তারা আমাদের প্রতি সংহতি দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে ধরপাকড়ও চালিয়েছে পুলিশ। এ পর্যন্ত নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বহু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের বলেছেন যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তারা।
কেউ কেউ বিক্ষোভ সফল বলেও দাবি করেছেন।
বাসিল বলেন, 'স্রোত পাল্টে গেছে। চাপ এখন ব্যাপক আকারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার, শিক্ষা, জীবন মানুষের জন্য, জীবনের জন্য, ফিলিস্তিনিদের জন্য ঝুঁকিতে ফেলতে ইচ্ছুক৷'
তিনি বলেন, 'আমরা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক