নির্দেশ অমান্য করেই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে ভেতর তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
দুই সপ্তাহ ধরে চলা শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি সোমবার (২৮ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ আদেশ অমান্য করে নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও ফিলস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ক্যাম্পাসে র্যালি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেয়ার পরেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই তাদেরকে বহিষ্কার করা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দেশটির টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তাদের অবস্থান ক্যাম্পও তুলে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা তাদের তাঁবু অপসারণের নির্দেশাবলি মানেনি। তারা অবস্থান ক্যাম্পে বড় পাথরের সন্ধান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দেয়া আইনজীবী জর্জ লব স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম কেইউটি নিউজকে বলেছেন, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোমবার প্রায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসি মন্তব্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচী বন্ধ করা ও সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সোমবার পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে হাউজ ডেমোক্র্যাটদের একটি দল।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ, ইসরায়েলকে সমর্থনকারী মার্কিন নীতির বিরোধিতার পাশাপাশি চলমান আন্দোলন ইহুদি-বিদ্বেষী কিনা সে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান ক্যাম্প উঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সেখান থেকে প্রায় শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এদিকে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসা শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার শেষ করতে দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে না আসায় তাদের বহিষ্কার করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাদেরকে সাময়িকভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি সার্টিফিকেট স্থগিত করা হয়েছে।
১৫ মে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই বহিষ্কার আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সাথে জড়িত অন্যতম সংগঠন কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ আদেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচিকে আরো সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের পরেও তাদের অবস্থান ক্যাম্প সরিয়ে নেয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে বাঁচাতে মানব ঢাল তৈরি করে অবস্থান ক্যাম্পের আশেপাশে অবস্থান করছে। অন্যদিকে পুলিশ ব্যারিকেড নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে অবস্থান করছে।
কল্মবিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। পুলিশ ভার্জিনিয়া টেক থেকে রবিবার রাতে ৯১ জনকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে যার মধ্যে বর্তমানে কলেজে নথিভুক্ত ৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সোমবার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. নেমাত শফিক বলেছেন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের বিষয়টি সমাধান করার পরিকল্পনা করলেও এটি ইসরায়েল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। ঘৃণামূলক বক্তব্য, হয়রানি এবং সহিংসতার কথা উল্লেখ করে ইহুদি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কংগ্রেসের এলিস স্টেফানিক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে এটিকে অকার্যকর নেতৃত্বের দায় ও 'খালি' হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন যা চলমান বিক্ষোভের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অন্যান্য রিপাবলিকানদের দ্বারা উত্থাপিত উদ্বেগের প্রতিধ্বনি।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের সংকটগুলো স্বীকার করে জোর দিয়ে বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আইনি সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়