সম্প্রচার বন্ধের পর আল জাজিরার কার্যালয়ে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযান
কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। রোববার জেরুজালেমের অ্যাম্বাসেডর হোটেলে আল জাজিরার অস্থায়ী কার্যালয়ে অভিযান চালায় ইসরায়েলি পুলিশ। খবর বিবিসি'র।
ইসরায়েলি স্যাটেলাইট সার্ভিস ইয়েস একটি বার্তায় জানায়, 'সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, ইসরায়েলে আল জাজিরা স্টেশনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে।'
যতদিন গাজা যুদ্ধ চলবে ততদিন ইসরায়েলে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে এবং হামাসের মুখপাত্র হয়ে কাজ করছে এমন অভিযোগে সম্প্রচারমাধ্যমটির বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
গত মাসে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়। এ আইনে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হলে বিদেশি সম্প্রচারমাধ্যমকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি নিরাপত্তার জন্য হুমকি এই দাবিকে 'বিপজ্জনক ও হাস্যকর মিথ্যা' বলে অভিহিত করেছে আল জাজিরা।
সম্প্রচারমাধ্যমটি বলেছে যে তারা আইনি পদক্ষেপ অনুসরণ করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী শ্লোমো কারহির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও পরিদর্শকরা একটি হোটেল কক্ষে প্রবেশ করছেন।
কারহি জানিয়েছেন, অভিযানে সকল সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিবিসির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চাইলেও পুলিশ তাদের ভিডিও ধারণ করতে বা হোটেলে ঢুকতে বাধা দেয়।
বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম ইসরায়েলে আল জাজিরা বন্ধের সমালোচনা করেছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর সিভিল রাইটস ইন ইসরায়েল (এসিআরআই) জানিয়েছে, তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে।
ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এফপিএ) ইসরায়েলি সরকারকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, দেশে আল জাজিরা বন্ধ করে দেওয়া মুক্ত গণমাধ্যমের সকল সমর্থকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা একই উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, 'ইসরায়েলি মন্ত্রিসভাকে অবশ্যই আল জাজিরা এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যমকে ইসরায়েলে বিশেষত যুদ্ধের সময় অবাধে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।'
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলি সরকারকে আহ্বান জানিয়ে এক্স-এ লিখেছে, 'স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম অপরিহার্য। কিন্তু এখন গাজা থেকে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।'
কাতার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরা ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু থেকেই ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে আসছে।
গাজা যুদ্ধে বহু সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজায় আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদোহের ছেলে সাংবাদিক হামজা আল-দাহদোহও রয়েছেন।
আল জাজিরার দাবি, ইসরায়েল ইচ্ছা করেই তাদের কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
রবিবারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় আল জাজিরা বলেছে, সাংবাদিকদের হত্যা ও গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল অপরাধ ধামাচাপা দিতে গণমাধ্যমকে দমনের যে চেষ্টা করছে, তা আমাদের দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন