গাজা যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, রাফাহ ক্রসিং নিজেদের দখলে নিল ইসরায়েল
মঙ্গলবার (৭ মে) গাজা ও মিশরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের দখল নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল রাতে দক্ষিণ গাজার শহরটিতে বিমান হামলা চালানোর পর আজ ট্যাংক নিয়ে এ সীমান্ত ক্রসিংয়ের দখল নিল ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে গেল গাজা যুদ্ধবিরতি।
এর আগে সোমবার গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে রাজি হয় হামাস। যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে মিশর ও ইরান। সম্মত হওয়ার কথা মিশর ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চিত করা হয়েছে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এখন ইসরায়েলিদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
কিন্তু ইসরায়েল জানিয়েছে, শর্তগুলো তাদের দাবি পূরণ করেনি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালানোর মাঝেই দেশটির সামরিক বাহিনী রাফাহতে হামলা চালিয়েছে।
সোমবার ইসরায়েল মিশরীয় সীমান্তবর্তী শহর রাফাহর কিছু অংশ খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল। গাজার প্রায় ২.৩ মিলিয়ন বাসিন্দা শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে রাফাহতে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় একজন নারী ও এক শিশুসহ পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ইসরায়েল বিশ্বাস করে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হামাস যোদ্ধা এবং সম্ভাব্য কয়েক ডজন জিম্মি রাফাহতে রয়েছে। তাই চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য মূল শহরটির দখল নিতে চায় তারা।
এর আগে ফিলিস্তিনিদের শহরের কিছু অংশ খালি করতে সতর্ক করার পর রাফায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটিতে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছে।
এই অভিযানের ফলে হাজার হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে এবং সোমবার অনেককে যানবাহনে বা গাধার গাড়িতে গাদাগাদি করে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
হামাসের এক কর্মকর্তা রাফার পূর্বাঞ্চল খালি করার আদেশকে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তা মিশরের উত্থাপিত পূর্ববর্তী প্রস্তাবের একটি নরম সংস্করণ। ওই প্রস্তাবে এমন শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'হামাসের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষের মতো দেখানোর উদ্দেশ্যে এটি একটি কৌশল বলে মনে হচ্ছে।'
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, হামাসের প্রস্তাব তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করলেও ইসরায়েল এখনও সম্ভাব্য চুক্তিগুলো খতিয়ে দেখতে আলোচক পাঠাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কাতার ও মিসরের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হামাসের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছে এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে জিম্মি চুক্তিটি ইসরায়েলি জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে।'
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তাদের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও মিসরের গোয়েন্দা প্রধানকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদনের কথা জানিয়েছেন।
প্রস্তাবের সঙ্গে পরিচিত ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, শর্ত মানা হলে শত্রুতামূলক তৎপরতা চিরতরে বন্ধ করতে সম্মত হবে হামাস।
হামাসের এ বক্তব্যে অনেকে ধারণা করেছিলেন হামাস সম্ভবত তার সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তির কথা ভাবছে। দুই ধাপে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কার্যকর হবে, যার প্রতিটি পর্যায় ৪২ দিন স্থায়ী হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে হামাসের নিকট জিম্মি ইসরায়েলি নারী সৈন্যদের মুক্তি দেওয়ার কথা। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এ সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরেই থাকবে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১১ দিনের মধ্যে ইসরায়েল গাজার কেন্দ্রস্থলের সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করবে এবং সালাহ আল-দিন রোড থেকে সরে যাবে যেটি উত্তর-দক্ষিণ রুটের প্রধান উপকূলীয় সড়ক। ১১ দিন পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরাঞ্চলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
হামাস নেতারা বলছেন, পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে ফলে গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আসবে এবং গাজার অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। হামাস এখন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে কিনা সে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসের রাজি হওয়ার খবর শুনে উল্লাসে রাস্তায় নেমে এসেছে গাজাবাসী।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন