কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র কী? যে কারণে রাশিয়া মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া করতে যাচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত সোমবার এমনটাই জানিয়েছে।
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে সাধারণত জনসম্মুখে জানায় না মস্কো। তবে এবার রুশ সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো ঘোষণা দিয়েই অনেকটা প্রকাশ্যে তা মহড়া করতে যাচ্ছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পুরো একটা শহরকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় যে মার্কিন বোমা ফেলা হয়েছিল তার ওজন ছিল ১৫ কিলোটন। আর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র প্রায় এক কিলোটনের মতো কম ওজনের হতে পারে।
যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য তৈরি এই ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র এরিয়াল বোম, স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা আর্টিলারি যুদ্ধাস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবে খুব কার্যকরী হতে পারে। এটি আকারে ছোট বলে সতর্কতার সাথে ট্রাক বা প্লেনে বহন করা যায়।
প্রথাগত পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যেকার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির অধীন। তবে কৌশলগত অস্ত্রগুলিকে কখনই এই চুক্তির অধীনে রাখা হয়নি। তাই রাশিয়াও অস্ত্রটির সংখ্যা বা তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্য কোনো তথ্য নির্দিষ্ট করে প্রকাশ করে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার পশ্চিমা দেশগুলিকে মস্কোর পারমাণবিক শক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। যাতে করে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে কিয়েভের প্রতি সামরিক সমর্থন বাড়ানো থেকে ঐ দেশগুলো সরে আসে৷
যুদ্ধের প্রথম দিকে পুতিন রাশিয়াকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় 'সকল উপায়' ব্যবহার করার জন্য বারবার মস্কোর পারমাণবিক অস্ত্রাগারের কথা উল্লেখ করে হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি হুমকির প্রবণতা কমিয়ে দেন। কেননা যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী বেশ ভালোই সাফল্য অর্জন করছে।
এদিকে পুতিন বলেছিলেন, "এমন কোন পরিস্থিতি নেই যা রাশিয়ান রাষ্ট্রত্ব এবং অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারবে। আমি মনে করি যে সুস্থ মনের ও স্পষ্ট স্মৃতির কোনও ব্যক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সাহস করবে না।"
গত বছর রাশিয়া তার কিছু কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বেলারুশের স্থানান্তরিত করেছে। মস্কোর এই মিত্র দেশটি ইউক্রেন এবং ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার প্রতিবেশী।
বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে মস্কোকে তার দেশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পুতিনের হয়ে কাজ করছে।
পুতিন ও লুকাশেঙ্কো উভয়েই বলেছেন যে, বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল কথিত পশ্চিমা হুমকি মোকাবেলা করা। এগুলো ব্যবহারে বেলারুশিয়ান পাইলট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তবে অস্ত্রগুলো রাশিয়ার সামরিক নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
ইউক্রেনের সাথে ১০৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বেলারুশের। এক্ষেত্রে দেশটিতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মোতায়েনের ফলে খুব সহজেই মস্কো তাদের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে আরও সহজে এবং দ্রুত আঘাত হানতে পারবে। এটি পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে বেশ কয়েকটি ন্যাটো মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য রাশিয়ার সক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়েছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান