রাফাহতে হামলা চালালে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিলেন বাইডেন
গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহতে বড় হামলা চালালে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— বুধবার (৯ মে) প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সতর্ক করে এ কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, "আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, যদি তারা রাফাহতে যায়… আমি সেসব অস্ত্র সরবরাহ করছি না যা ঐতিহাসিকভাবে রাফাহতে হামলা করার জন্য, শহরগুলোতে অভিযান চালানোর জন্য এবং সমস্যাকে মোকাবেলা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।"
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্রের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান অবনতির মধ্যেই রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকানোর প্রচেষ্টায় বাইডেনের বক্তব্যটি এখন পর্যন্ত জনসম্মুখে চলমান গাজা যুদ্ধ নিয়ে তার দেয়া সবথেকে শক্তিশালী বক্তব্য।
বাইডেন স্বীকার করেছেন, মার্কিন অস্ত্রগুলো গাজায় বেসামরিক লোকদের হত্যা করার জন্য ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। হামাসকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিগত সাত মাস ধরে গাজায় আক্রমণ চালিয়েছে দেশটি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৮৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
ইসরায়েলকে ২ হাজার পাউন্ডের বোমা পাঠানোর ব্যাপারে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "ইসরায়েলকে পাঠানো বোমাগুলোর হামলায় গাজায় বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।"
মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, রাফাহতে বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর আশঙ্কা থেকেই ইসরায়েলে ১ কোটি ৮০ লাখ ২ হাজার পাউন্ড (৯০৭ কেজি) ও ১৭ লাখ ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমার চালান স্থগিত করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান এই সপ্তাহের শুরুতে চালান স্থগিত করার পর ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তকে 'খুবই হতাশাজনক' বলে অভিহিত করেছিলেন যদিও তিনি বিশ্বাস করেননি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে।
ইসরায়েল এ সপ্তাহে রাফাহ আক্রমণ করেছে যেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বাইডেন বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের হামলাকে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ বলে মনে করেন না কারণ 'জনবহুল' এলাকায় হামলা চালানো হয়নি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে. অস্টিন প্রকাশ্যে অসংখ্য ভারী বোমার চালান স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরপরই বাইডেনের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল। রাফাহকে মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে মার্কিন প্রশাসন বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই সেখানে ইসরায়েলি আক্রমণের বিরোধিতা করেছে৷
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পরেই গাজায় সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের চলমান অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের ওপর মানুষ নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী এবং ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর অস্ত্র সরবরাহ আরো বাড়িয়েছে।
২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি সরকারের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ১০ বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্মারক অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছরে ইসরায়েলকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্রদান করবে, সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ৩৩ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে। গত মাসে কংগ্রেসে ইসরায়েলের জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত তহবিল অনুমোদন করা হয়েছিল।
কিন্তু বাইডেন জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করা অব্যাহত রাখবে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়