শুধু বিলিয়নিয়াররা মোদির ভারতকে ধনী দেশে পরিণত করবে না
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের একটি শহর জামনগর। গত মার্চে এখানেই বসেছিল এক তারার মেলা। দুনিয়ার নামজাদা সব ধনী থেকে শুরু করে বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পীরা এসেছিলেন মুকেশ আম্বানির অতিথি হয়ে। তাদের ব্যক্তিগত জেট আর চার্টার করা ফ্লাইটের ভিড় সামলাতে মহাব্যস্ত সময় কাটে জামনগরের ছোট্ট বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের।
এশিয়ার সেরা ধনী মুকেশ এই আয়োজন করেছিলেন –তার ছেলে অনন্তের বিবাহপূর্ব পার্টির জন্য। এতে বলিউড আর হলিউডের তারকারা তো ছিলেনই, সঙ্গে নজর কাড়ে মার্ক জুকারবার্গ ও বিল গেটসের মতো প্রভাবশালী বিলিয়নিয়ারদের উপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের কেন্দ্র বলে পরিচিত – সিলিকন ভ্যালির প্রায় ১,২০০ অতিথি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
বাজারমূল্যে ভারতের সবচেয়ে দামি কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৬৭ বছরের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির জমকালো ও ব্যয়বহুল এই পার্টি বিশ্ব গণমাধ্যমের মুখরোচক খবরেও পরিণত হয়। তিন দিন ধরে চলা এই পার্টিতে পারফর্ম করেন রিহানা, ডেভিড ব্লেইন থেকে শুরু করে বিখ্যাত শিল্পীরা।
মুকেশ আম্বানির বিপুল সম্পদ ও প্রভাবের দারুণ এক প্রদর্শনীও ছিল এ আয়োজন। তবে ভারতের অন্য ধনকুবেরদেরও উৎসবকাল চলছে। রমরমা হচ্ছে তাদের ব্যবসা। যার হাত ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত নতুন রূপ নিচ্ছে।
বাকিদের মধ্যে সবার আগেই নাম করতে হয় গৌতম আদানির। আদানি গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠাতা – অবকাঠামো নির্মাণখাতের এক টাইকুন। মাত্র এক দশকের মধ্যে তার বিপুল গতির উত্থান হতচকিত করেছে বিশ্বকে। এমনকি ২০২২ সালে কিছু সময়ের জন্য জেফ বেজোসকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা ধনীর স্থান অধিকার করেছিলেন।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রোহিত লাম্বা মুকেশ ও গৌতমের সম্পর্কে মন্তব্য করেন, "তারা হচ্ছেন বিস্ময়কর উদ্যোক্তা। ভারতের প্রাণবন্ত অথচ প্রায় সময়ে বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠা রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশের মধ্যে তারা প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেসব খাত উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেন, ঠিক সেসব খাতেই নিপুণভাবে বাজি ধরার দক্ষতা থাকায় এ দুজনের কদরই করেন বিনিয়োগকারীরা। মোদি ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচনে জিতলে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবেন।
এসব বাস্তবতায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারত একবিংশ শতকের এক অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। চীনের সাথে পশ্চিমা দুনিয়ার যখন মুখোমুখি অবস্থান, তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরাও এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ভারতে বিনিয়োগ করছেন। ভারত চীনের বিকল্প হবে এমন আশাও করেন অনেকে। তাছাড়া, চীন নির্ভরতা কমিয়ে পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনা এবং ঝুঁকি কমানোর উদ্দেশ্য তো আছেই।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও আদানি গ্রুপ বিশাল দুই শিল্পগোষ্ঠী। প্রত্যেকের বাজারমূল্যায়ন ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তিখাত –সমস্ত ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের ব্যবসা।
ফলস্বরূপ নতুন ভারতের রূপকার বলা হচ্ছে – নরেন্দ্র মোদি, মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানিকে। আসছে দশকগুলোয় ভারতকে অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত করতে তারা মুখ্য ভূমিকা রাখছেন।
নতুন যুগের রকফেলার!
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মুম্বাই। এই শহরের সর্বত্রই আদানি-আম্বানিদের প্রতিপত্তির ছাপ নজরে আসে। যেমন নগরীর ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি পরিচালনা করছে আদানি গ্রুপ।
আদানি ও আম্বানিদের রিলায়েন্সের নাম শহরজুড়ে ছড়ানো। মহাসড়কের পাশের তাদের প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডের লোগো থেকে শুরু করে সুউচ্চ বহুতল আবাসিক ভবনের নামকরণে। আম্বানি পরিবারের নামে করা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান – কোথায় নেই তাদের উপস্থিতি!
কিছু স্থাপনার আবার কোনো উজ্জ্বল লোগো বা প্রাতিষ্ঠানিক নামের দরকার নেই। এগুলোর মালিক কারা তা সবাই জানে। যেমন পুরো মুম্বাইয়ের বাসিন্দারা জানেন – অ্যান্টিলা হচ্ছে মুকেশ আম্বানি ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত অট্টালিকা। এটি নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। একটি স্পা, তিনটি হেলিপ্যাড ও ৫০ আসনের মুভি থিয়েটার – কী নেই এখানে! ২৭ তলা ভবনটি যে সড়কের পাশে অবস্থিত – এখন সেটিকে বলাই হয় 'বিলিয়নিয়ার রো'।
ভারতের অতি-ধনীরা আজ যেমন প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী তা দ্রুত শিল্পায়ন হওয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর আগে দেখা গেছে।
মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিলিয়নিয়ার জন ডি রকফেলারের সাথে প্রায়ই তুলনা করেন সাংবাদিকরা। রকফেলার ছিলেন ১৯ শতকে তিন দশক ধরে চলা বিস্ময়কর শিল্পায়ন যুগেরই প্রতীক।
ওই দশকগুলোতে মার্কিন শিল্পপতিদের বিত্তবৈভব আকাশচুম্বী উচ্চতায় পৌঁছায় – আমেরিকাজুড়ে গণপরিবহন, কলকারখানা ও নগরকেন্দ্রের বিস্তারের হাত ধরে। এই সময়ের অন্যান্য বিখ্যাত ধনকুবেরদের মধ্যে ফ্রিক, অ্যাস্টর, কার্নেগি ও ভ্যান্ডারবিল্টদের নাম নেওয়া যায়। এই ধনীরা দেশের অবকাঠামো খাতকে আধুনিক রূপে গড়তে অবদান রাখেন।
এশিয়ার আরো সাম্প্রতিক সময়ের এমন ধনীদের 'চায়েবল' পরিবারের নাম করা যায়। স্যামসাং ও হুন্দাইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে যাদের আধিপত্য রয়েছে। এই শিল্পগোষ্ঠীগুলো আজ সেমিকন্ডাক্টর ও অটোমোবাইল নির্মাণে বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থানে।
ভারতীয় ধনকুবেরদের নিয়ে 'দ্য বিলিয়নিয়ার রাজ' বইয়ের লেখক জেমস ক্র্যাবট্রি বলেছেন, "আমেরিকা বা অন্যান্য অনেক দেশের রূপান্তরের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে – এখন ভারত তার মধ্যে রয়েছে। ব্রিটেনে তা ঘটেছে ১৮২০ এর দশকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে এবং চীনে ২০০০ এর দশকে।"
উন্নয়নশীল কোনো দেশের জন্য এমন দ্রুত প্রবৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে যাওয়াটাই 'স্বাভাবিক'। এতে সমাজের 'উচ্চশ্রেণির হাতে বিপুল আয় জমা হতে থাকে, বৈষম্য বাড়ে। সরকার ও ব্যবসায়ী নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পুঁজিবাদের চর্চা দেখা যায়।"
এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশই আজ দেখা যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতিতে।
ভারতের অর্থনীতির আকার এখন ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার, যা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। নরেন্দ্র মোদির এক দশক ক্ষমতায় থাকার সময়ে অর্থনীতির আকারে চার ধাপ উপরে উঠেছে ভারত। এমনকি পেছনে ফেলেছে যুক্তরাজ্যকে।
বড় কোনো দুর্যোগ না আসলে – আগামী কয়েক বছর অনায়াসে অন্তত ৬ শতাংশ হারে বিকশিত হবে ভারতের অর্থনীতি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হতে হলে দেশটিকে ৮ শতাংশ বা তার বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
প্রবৃদ্ধির ধারা টেকসই হলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিদের কাতারে আরো উত্থান হবে ভারতের। ২০২৭ সাল নাগাদ দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে বলেও কিছু পর্যবেক্ষক পূর্বাভাস দিয়েছেন।
এতো গেল সাফল্যের পরেও তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব হার বাড়ছে দেশটিতে। বৈষম্যও দীর্ঘদিনের সমস্যা হিসেবে রয়েই গেছে। ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির সময়ে যা আরো বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের জীবনমান নির্ধারণের
একটি সূচক – মোট দেশজ পণ্যের জনপ্রতি হিসাবে বিশ্বের মধ্যে ১৪৭তম স্থানে ছিল ভারত। যা খুবই নিচের দিকের অবস্থান।
কয়লা থেকে সৌরবিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল থেকে ইন্টারনেট
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে সড়ক, বন্দর, এয়ারপোর্ট ও রেলপথের মতো অবকাঠামোয় হাজার হাজার কোটি রুপি ব্যয় করছে মোদি সরকার। ব্যাপক জোর দিচ্ছে ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে, যা ব্যবসাবাণিজ্যের পাশাপাশি নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনমানকে উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই রূপান্তরে মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভূমিকা রাখছেন আম্বানি ও আদানি।
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট গ্যালেনের সামষ্টিক অর্থনীতির অধ্যাপক গিয়েডো কোজ্জি বলেন, "তাদের শিল্পগ্রুপ দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং (সরকারের সাথে) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।" মোদি ক্ষমতায় আসার অনেক বছর আগেই যে আদানি গ্রুপ ও রিলায়েন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ গঠিত হয়েছিল সেটিও তিনি উল্লেখ করেন।
"এগুলো কোনো স্থবির এককেন্দ্রিক শিল্পগোষ্ঠী নয়। তারা খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি অবকাঠামো নির্মাণেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সীমিত নয়, ডিজিটাল ইনোভেশনের মাধ্যমে দেশটির সংযোগ বিস্তারেও পরোক্ষভাবে এ দুই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সাহায্য করছে" - বলেন তিনি।
রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুকেশের বাবা ধীরুভাই আম্বানি। ১৯৫৭ সালে মুম্বাইয়ে এক ছোট্ট সুতার ব্যবসা দিয়ে পথ চলা শুরু তার। তারপরে শুধু বেড়ে ওঠা, পরের কয়েক দশকে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পেট্রোকেমিক্যাল ও টেলি-যোগাযোগ খাতে এক মহীরুহে পরিণত হয় রিলায়েন্স।
ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর কোম্পানির জ্বালানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসার সত্ত্ব পান মুকেশ। এরপর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে রিলায়েন্সকে প্রযুক্তি খাতের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তিতে রূপ দিয়েছেন।
মাত্র এক দশকেরও কম সময়ে রিলায়েন্সকে ভারতের টেলিকম খাত থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও খুচরা ব্যবসার শীর্ষ পরিচালকে রূপ দিয়েছেন মুকেশ।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিরামহীন ব্যবসা সম্প্রসারণে তারই সমতুল্য হচ্ছেন গৌতম আদানি। বন্দর, কয়লাখনি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস খাতে আজ বিস্তৃত তার ব্যবসা।
আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাও তারই হাতে। ৬২ বছরের এই ধনকুবেরের যাত্রা শুরু হয়েছিল হীরের ব্যবসার মাধ্যমে। এরপর ১৯৮৮ সালে পণ্যদ্রব্য বাণিজ্য শুরু করেন। যা পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডে (এইএল) এ পরিণত হয়।
আমেরিকার পুঁজিবাজারের একটি ব্রোকারেজ সংস্থা ক্যান্টর ফিৎজেরাল্ড গত জানুয়ারিতে তাদের বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক নোটে উল্লেখ করেছে, ভারত যা কিছু অর্জন করতে চায় তার কেন্দ্র রয়েছে' এইএল।
আদানি গ্রুপের বাকি সব ব্যবসার সূচক হিসেবেও কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ক্যান্টোর বিনিয়োগকারীদের বলেছে, এইএল বিমানবন্দর, সড়ক ও জ্বালানি খাতে নিয়োজিত আছে, ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য এটি একটি অভাবনীয় সুযোগ হতে পারে।
আদানির অন্য ব্যবসাগুলোও নিজ নিজ খাতের শীর্ষ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে।
কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিপুল অর্থ আয় করলেও – এখন গ্রুপটি পরিচ্ছন্ন বা দূষণমুক্ত জ্বালানি উৎপাদনে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার ঢালছে। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার সাথে সঙ্গতি রেখে সবুজ জ্বালানির দিকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি এখন ভারতের। দেশটিতে অন্যান্য বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও আছে। এদের মধ্যে ১৫৬ বছরের শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের নাম না করলেই নয়। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে তাদের আছে গভীর প্রভাব। শিল্প থেকে শুরু করে বিমান খাত – অগণিত দিকে তাদের ব্যবসা। তবে নতুন শিল্পগোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে যতটা সমালোচনা আছে, পুরোনোগুলোর তা নেই। এর অন্যতম কারণ টাটা শিল্পগোষ্ঠী এখন প্রধানত দাতব্য ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, ব্যবসার নেতৃত্ব উদ্যোক্তা পরিবারের আধিপত্যও আগের চেয়ে কমানো হয়েছে।
আদানি বা আম্বানির শিল্পগোষ্ঠী দুটি মোদির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দুই চ্যাম্পিয়ন। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এই অতি-ধনীদের সাথে মোদির সম্পর্ক নিয়ে নানান সময়ে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছে।
ভারতে চলমান নির্বাচনের মধ্যে 'বিশেষ এই সম্পর্ক' নিয়ে আবারো আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের অর্থায়ন বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক প্রসন্ন তন্ত্রী অবশ্য বলছেন, 'ক্রোনি ক্যাপিটালিজম' বা ধনীদের সাথে সরকারি সম্পর্কের মাধ্যমে চালিত পুঁজিবাদ ভারতে আগের চেয়ে বাজে রূপ নিয়েছে, "এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।"
তার মতে, ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের বণ্টন এবং দেউলিয়াত্ব আইনের সংস্কার– মোদির গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে অন্যতম।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজনীতিবিদ ও অভিজাত ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দেশটি আরো দ্রুত উন্নতি করবে।
ক্র্যাবট্রির মতে, "অর্থনীতিতে দুর্নীতি কখনোই শূন্যে নামে না।" তাই ভারতকে আরো স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় সংস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি, যারা দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
বড় শিল্পগোষ্ঠীর আরেক সমস্যা একচ্ছত্র আধিপত্য। অনেক সময় এতে নতুন পণ্য বা সেবার উদ্ভাবন থমকে পড়ে, যা অর্থনীতিকেও মন্থর করে তুলতে পারে।
নির্বাচনের পরে ভারতের নতুন সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ ও সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে। এজন্য মান্ধাতার আমলের আইন বা বিধিমালা সংস্কার করে মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পথ যেন বাধামুক্ত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। দরকার আছে নতুন ভূমি ও শ্রম আইনেরও। এতে ব্যবসা পরিচালনার বাধাগুলো দূর হবে। এসব ক্ষেত্রে নতুন সরকার ব্যর্থ হলে – তা ভারতের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে থাকবে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রোহিত লাম্বা বলেন, প্রতিমাসে লাখ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে, এদের সবার কর্মসংস্থান দিতে পারবে না গুটিকয় বড় শিল্পগোষ্ঠী। "আম্বানি বা আদানির মতো কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে ভারত ধনী হতে পারবে না। তাই ভারতকে আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে।"
অনুবাদ: নূর মাজিদ