প্রতিবেশী দেশগুলোর ‘গণতন্ত্র ব্যত্যয়কারীদের’ অনুকরণ করছেন মোদি: কেজরিওয়াল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মোদি 'নির্বাচনে হারছেন' এমন দাবি করে কেজরিওয়াল অভিযোগ করেন– তিনি পাকিস্তান, রাশিয়া ও বাংলাদেশের নেতাদের মতো অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করছেন।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য ডনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কেজরিওয়ালের এসব মন্তব্য তুলে ধরা হয়। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকারও রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে ভরছে।
কেজরিওয়াল তাঁর বিবৃতিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি ইমরান খানকে 'পাকিস্তানের সর্বোচ্চ (জনপ্রিয়) নেতা' উল্লেখ করে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে ইমরানের পরাজয় নিশ্চিত করতেই প্রতিপক্ষ তাঁকে জেলে দিয়েছে।
কেজরিওয়াল বলেন, "যদি তিনি জিতে যান, তাহলে মোদি অবশ্যই উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পাওয়ারামং-সহ অন্যান্য (বিরোধী) নেতাদের জেলে পাঠাবেন।"
চলমান লোকসভা নির্বাচনে ভারতের বিরোধী দলগুলো 'ইন্ডিয়া' নামের জোট গঠন করেছে। আজ রোববার (১৯ মে) এই জোটের এক বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এই বিবৃতি প্রদান করেন। উল্লেখিত দুই নেতাও এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২১ মার্চ রাতে নিজ বাসভবন থেকে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ভারতের আর্থিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা- এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দিল্লি সরকারের আবগারি নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে– দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ সম্পর্কিত এক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর গত ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ২১ দিনের জামিনে কারামুক্তি পেয়েছেন কেজরিওয়াল। তবে জামিনের মেয়াদ শেষে ২ জুন তাঁকে আবারো জেলে যেতে হবে। আদালত কেজরিওয়ালকে তাঁর নিজ দল আম আদমি পার্টি (আপ) ও মিত্র জোটের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
একইদিন দিল্লিতে আম আদমি পার্টির এক বৈঠকে অংশ নিয়ে এবিষয়ে তিনি বলেন, "ভোট গণনা শুরুর আগেই আমাকে জেলে ফিরতে হবে। আমরা যদি জিতে যাই, তাহলে ৫ জুন মুক্তি পাব, নাহলে আমাকে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হবে।"
ভারতের অত্যন্ত কঠোর এক অর্থপাচার আইনের আওতায় 'দুর্নীতির' অভিযোগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল, উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণিশ সিসোদিয়াসহ আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতাদের জেলে নেওয়া হয়েছে।
পাঞ্জাবের এক সভায় এবিষয়ে কেজরিওয়াল বলেন, "আমাদের দেশে যে স্বৈরাচার চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। গত ৭৫ বছরে এমন যুগ আর পায়নি ভারত, যেখানে বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা হয়।"
তিনি বলেন, মোদি সরকার (প্রধান বিরোধী দল) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ডিএমকে দলের নেতাদের হয়রানি করছে, যারা বিজেপির মূল রাজনৈতিক বিরোধী।
"সবাইকে জেলে ভরো। তখন মাত্র একটাই দল আর একজন নেতা অবশিষ্ট থাকবে, কিন্তু গণতন্ত্র আর টিকবে না। আমরা এটা হতে দেব না" যোগ করেন তিনি।
আপ-এর রাজ্যসভা সদস্য স্বাতী মালিওয়ালকে মারধর ও হেনস্তা করার অভিযোগে কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত সচিব বিভব কুমার গ্রেপ্তার হওয়ার একদিন পরেই এসব মন্তব্য করলেন তিনি।
গতকাল (১৮ মে) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বিভবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি এজাহারও নিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আম আদমি পার্টি নতুন করে বেকায়দায় পড়তে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এজাহারে স্বাতী অভিযোগ করেছেন, বিভব তার বুক, পেট ও তলপেটে লাথি মেরেছেন। আত্মরক্ষা করার জন্য বিভবকে লাথি মেরে সরিয়ে দিতে গেলে তিনি স্বাতীর শার্ট ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে টান মারেন।
স্বাতীর দাবি, ঘটনার সময় নিজ বাসভবনেই ছিলেন কেজরিওয়াল।