থাইল্যান্ডে হাতির যমজ শাবক জন্মের বিরল ঘটনা
থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে একটি এশিয়ান হাতি বিরল যমজ শাবকের জন্ম দিয়েছে। হাতির দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এ ঘটনাকে 'অলৌকিক' বলে আখ্যা দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
যমজ শাবকের জন্ম দেওয়া ৩৬ বছর বয়সি মা হাতিটির নাম চামচুরি। হাতিটি যমজ শাবকের জন্ম দেবে, এমনটি আগে কেউ ধারণা করতে পারেনি।
থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া এলিফ্যান্ট প্যালেস অ্যান্ড রয়্যাল ক্রালে পার্কে গত সপ্তাহের শুক্রবার চামচুরি প্রথমে একটি পুরুষ শাবকের জন্ম দেয়। পার্কের কর্মীরা তখন ভেবেছিলেন, হাতিটির প্রসব শেষ।
কিন্তু প্রথম শাবকটিকে পরিষ্কার করিয়ে তাকে দাঁড়াতে সাহায্যের করার সময় কর্মীরা ধপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে পান। তখন তারা বুঝতে পারেন, আরেকটি শাবকের জন্ম দিয়েছে চামচুরি। দ্বিতীয় ওই শাবকটি মেয়ে।
দ্বিতীয় শাবকের জন্ম মা হাতিটিকে আতঙ্কিত করে তোলে। আতঙ্কিত মা হাতি যাতে দ্বিতীয় শাবকটিকে পা দিয়ে মাড়িয়ে না দেয়, সেজন্য দ্রুত তৎপর হন তত্ত্বাবধানকারীরা। চামচুরিকে হাতিকে সামলাতে গিয়ে একজন তত্ত্বাবধানকারী আহতও হন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে হাতির দেখভালকারীরা ভিড় জমিয়েছেন। তারা দ্রুত সঙ্গে দ্বিতীয় শাবকটিকে মা হাতির কাছ থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, মা হাতির পেছনের পায়ে তখনও সন্তান প্রসবের দরুন রক্ত লেগে রয়েছে।
সেভ দ্য এলিফ্যান্টস নামে একটি গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে হাতি যমজ শাবকের জন্ম দেয়। আবার পৃথক লিঙ্গের (ছেলে-মেয়ে) যমজ শাবকের জন্ম নেওয়ার ঘটনা আরও বিরল।
থাই পশুচিকিৎসক লার্ডথংটার মিপান বিবিসিকে বলেন, 'আমরা দ্বিতীয় শাবকটিকে টেনে মা হাতির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিই। এ ঘটনায় আমরা সবাই উল্লসিত হয়ে উঠি, কারণ এ এক অলৌকিক ঘটনা।'
মিপান নিজেও যমজ সন্তানের মা। তার বেড়ে ওঠা ওই হাতি পার্কেই। তিনি বলেন, 'আমাদের আজীবনের ইচ্ছা ছিল হাতির যমজ শাবক দেখা। কিন্তু সবাই তা দেখতে পারেন না, কারণ এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটে না।"
দ্বিতীয় শাবকের জন্মের পর মা হাতিটিকে সামলাতে গিয়ে পা ভেঙে গেছে পার্কের ৩১ বছর বয়সী মাহুত চারিন সোমওয়াংয়ের।
তবে চারিন বলেন, 'আমি এতই খুশি হয়েছিলাম যে (পা ভাঙার) ব্যথা টেরও পাইনি।'
থাইল্যান্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। দেশটিতে হাতিকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটির জাতীয় প্রতীকও হাতি।
আয়ুথায়া এলিফ্যান্ট প্যালেস অ্যান্ড রয়্যাল ক্রালে পার্কে জমজ শাবক দুটির জন্ম নেওয়ার প্রক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়েছিল।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর পার্কের অভ্যাগতদের বাচ্চা দুটিকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
মেয়ে শাবকটি সাধারণ আকারের চেয়ে একটু ছোট, ওজন ৫৫ কেজি। অন্যদিকে জন্মের সময় পুরুষ শাবকটির ওজন ছিল ৬০ কেজি।
পার্কটির দাবি, সেখানকার সবগুলো হাতিই আগে রাস্তায় ভিক্ষা করত। সেখান থেকে সেগুলোকে উদ্ধার করে পার্কে আনা হয়েছে।