'পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিল না'; তীব্র গরমে অসংখ্য মৃত্যু: হজের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরমে হজযাত্রীদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ওষুধ বা মৌলিক সুবিধা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হজ থেকে ফিরে তীর্থযাত্রীরা সিএনএনকে এমনটাই জানিয়েছেন।
চলতি বছর হজ চলাকালীন তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। সৌদির সরকারের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ ছাড়িয়েছে।
মৃতের সংখ্যা আরও বেশি কি-না; তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় তীর্থযাত্রীদের জ্ঞান হারানো ছিল অহরহ ঘটনা। এছাড়াও অনেকেই হেঁটে যাওয়ার সময় সাদা কাপড়ে মানুষকে ঢেকে রাখার মতো ভয়ানক দৃশ্য দেখেছে।
৪০ বছর বয়সি জিরার আলী গত শুক্রবার তার ৭০ বছর বয়সী বাবার সাথে হজ পালন শেষে লন্ডনে পৌঁছেছেন। তিনি সিএনএনকে জানান, হজ কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদের পর্যাপ্ত পানি, ছায়া ও চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
প্রায়শই মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে আলী বলেন, "আমার কাছে মনে হয়েছিল যে, সেখানে লোকের তুলনায় পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। শারীরিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হলেই কেবল তাদের পাওয়া গিয়েছে। মানুষগুলোকে কষ্ট দেখে আমি আমার হজে মনোযোগ দিতে পারিনি।"
আলীর মতো একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ৪৪ বছর বয়সী হজযাত্রী আহমেদ। তিনি অনেক লোককে অসুস্থ হতে এবং এমনকি গরমে মারা যেতে দেখেছেন বলেন জানান।
তিনি বলেন, "আমি অনেক তীর্থযাত্রীকে দেখেছি যারা মারা গেছে। প্রায় প্রতি কয়েকশ মিটারে (সাদা কাপড়ে ঢাকা) লাশ পড়ে ছিল।"
স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা কোনো অ্যাম্বুলেন্স না দেখার কথা জানিয়ে আহমেদ আরও বলেন, "স্থানীয় বাসিন্দা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছ থেকে আসা পানি দ্রুতই ফুরিয়ে আসছিল।"
এক্ষেত্রে উভয় তীর্থযাত্রী চলতি বছরের হজ চলাকালীন দুর্বল অবকাঠামো ও অব্যবস্থাপনার কথা জানান। বিশেষত যারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্যুর গ্রুপের বাইরে নিজ থেকে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য দুর্ভোগ যেন আরও বেশি ছিল।
এদিকে হজ উপলক্ষ্যে সৌদি কর্মকর্তারা তীর্থযাত্রীদের ছাতা ব্যবহার ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একইসাথে দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে সূর্যের সংস্পর্শ এড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। তবে আরাফাত ময়দানে অনুষ্ঠিত প্রার্থনাসহ হজের বেশকিছু আচার-অনুষ্ঠান দিনের বেলায় বাইরে থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পালন করতে হয়।
সৌদি কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে, চলতি বছর হজে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ লাখ মানুষই বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে।
এদিকে সৌদির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহদ বিন আব্দুল রহমান আল-জালাজেল বলেন, "হজকে ঘিরে যে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল সেটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রোগের বড় প্রাদুর্ভাব ও অন্যান্য জনস্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিরোধ করা গেছে।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান