একসময় ফুজির ক্যামেরা ব্যবসায় ধস নেমেছিল, এখন চাহিদামতো জোগান দিয়ে কুলাতে পারছে না
ক্যামেরা ব্যবসার একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নাম জাপানের ফুজিফিল্ম। প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্ব দিয়ে অনেক বছর নিজেদের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা থেকে দূরে ছিল। তবে টিকটকের কল্যাণে ফুজির এক্স১০০ ডিজিটাল ক্যামেরার বিক্রি তুঙ্গে উঠেছে। তারই সুবাদে চাঙা কোম্পানিটির ব্যবসা।
চাহিদা এতটাই তুঙ্গে যে ১ হাজার ৫৯৯ ডলার দামের ক্যামেরাটির জোগান দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না ফুজিফিল্ম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তরুণ ভক্তদের কাছে সুদৃশ্য চেহারা ও উচ্চমানের এ ক্যামেরা এখন বিপুল জনপ্রিয়।
এক্স১০০ভি মডেলের ক্যামেরাটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে গত অর্থবছরে ফুজির রেকর্ড মুনাফা হয়েছে। আর এই মুনাফায় সবচেয়ে বড় অবদান এ ক্যামেরার। ২০২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফার ৩৭ শতাংশই এসেছে এক্স১০০ভি মডেলের ক্যামেরা বিক্রি থেকে।
গত বছর ফুজি এ ক্যামেরার উৎপাদন বাড়িয়েছে। যদিও উৎপাদন কতটা বাড়িয়েছে, বা কত ইউনিট বিক্রি হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানাতে রাজি হয়নি।
তবে তারা জানিয়েছে, অর্ডার তাদের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদন দ্বিগুণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও তারা সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠতে পারেনি।
ফুজিফিল্মের যাত্রা শুরু ৯০ বছর আগে। তখন এ শিল্পের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি কোডাককে তুমুল প্রতিযোগিতায় ফেলে ফুজি। অবশেষে ২০০১ সালে ফুজির বিক্রি কোডাককে ছাড়িয়ে যায়। তবে এই বিজয় ছিল ক্ষণস্থায়ী, কারণ এর কিছুদিন পরই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ধসে পড়ে। মোবাইল ফোনের ডিজিটাল ক্যামেরা হয়ে ওঠে ছবি তোলার প্রধান মাধ্যম।
টিকে থাকতে ফুজিফিল্ম ফিল্ম কেমিক্যালের দক্ষতা স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাজে লাগায়। ক্যানন ও অলিম্পাসও একই পথ ধরে। ফুজি ক্যামেরা উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেয়নি, তবে ফিল্ম বিভাগে ৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে। এছাড়া অধিকাংশ উৎপাদনই চীনে সরিয়ে নেয়।
করোনা মহামারির সময় অ্যান্টিভাইরাল পিল বেচে ও টিকা কার্যক্রম চালিয়ে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়। তবে এখন আবার কোম্পানিটির মূল ব্যবসা হয়ে উঠেছে ক্যামেরা।
এক্স১০০ মডেলের ক্যামেরা প্রথম বানানো হয় ২০১১ সালে। উদ্দেশ্য ছিল ফুজিফিল্মের পেশাদার গ্রেড ক্যামেরা বিভাগকে উদ্ধার করা। তবে ক্যামেরাপ্রেমীরা বলছেন, এর মূল আকর্ষণ রয়েছে স্মৃতিকাতরতায়।
ক্যামেরার সরঞ্জামাদির সাইট শটকিট-এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক কনডন বলেন, 'এর চেহারা ছিল রীতিমতো যুগান্তকারী…একদম ফিল্ম ক্যামেরার মতো।'
সংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখি করেন টোকিওভিত্তিক লেখক ডব্লিউ ডেভিড মার্ক্স। তিনি বলেন, 'স্মার্টফোনে ছবি তোলা এতই সহজ যে ছবির গুরুত্বই কমে গেছে। আবার ফিজিক্যাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে, ফিল্ম ডেভেলপ করে ছবি বের করে সেই পুরনো রোমাঞ্চ খানিকটা ফিরে আসে। সেইসঙ্গে ছবি তোলার গুরুত্বও খানিকটা বাড়ে।'
মহামারির পর ফের ভ্রমণ শুরু হওয়ায় ক্যামেরার চাহিদাও বেড়েছে। আর ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা এক্স১০০ মডেলের ক্যামেরাকে রীতিমতো মর্যাদার প্রতীকে পরিণত করেছেন।
টিকটকের ইনফ্লুয়েন্সার বেঞ্জামিন লি বলেন, 'আপনাকে ছবি তুলতে উৎসাহী করে তুলবে এমন একটা সুদর্শন ক্যামেরা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্স১০০ সিরিজ মূলত একটা ফ্যাশন অ্যাকসেসরি, আর ক্যামেরা হিসেবেও দুর্দান্ত।'
চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় বিভিন্ন নিলামঘরে ব্যবহৃত এক্স১০০ ক্যামেরা কয়েকগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ক্রেতাদের দিনের পর দিনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ফুজিফিল্মের প্রধান নির্বাহী তেইচি গোতো গত মাসে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দাম বাড়িয়ে রাখার জন্য তারা সরবরাহ ঘাটতি বজায় রাখবেন।
৯ মে কোম্পানির প্রেজেন্টেশনে গোতো বলেন, 'অতিরিক্ত উৎপাদন করে দাম কমিয়ে ফেলাটা বেশ দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হবে।'
তবে চাহিদামতো জোগান না পাওয়া এবং চড়া মূল্যের কারণে ক্রেতারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্যামেরা কিনতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইনফ্লুয়েন্সার লি। ক্যাননের জি৭এক্স ও রিকো-র জিআর সিরিজের ক্যামেরা বাজারে আছে।