বন্দী বিনিময়কে কেন পুতিন নিজের বিজয় হিসেবে দেখছেন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিনকে সশরীরে বিমানবন্দরে গিয়ে কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু রুশ বন্দীদের স্বাগত জানাতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মস্কোর ভনুকোভো বিমানবন্দরে যান পুতিন।
স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আকারের বন্দী বিনিময় চলছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং চারটি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে। তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই বিনিময় চুক্তি হয়েছে।
চুক্তির আওতায় ১০ রুশ বন্দী মুক্তি পেয়েছেন। তাদের বহনকারী বিমান রানছোঁয়া মাত্রই, সিঁড়ি দিয়ে একে একে গুপ্তচর, স্লিপার এজেন্ট ও একজন সাজাপ্রাপ্ত আততায়ীসহ সকল বন্দিরা রাশিয়ার মাটিতে পা রাখেন।
পুতিন বলেন, 'মাতৃভূমিতে ফিরে আসার জন্য আপনাদের অভিনন্দন!'
ক্রেমলিনে এখন উৎসবের আমেজ। ফিরে আসা রাশিয়ানদের লাল গালিচা অভ্যর্থনা এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছে। ফুলের তোড়া ও আলিঙ্গনের মাধ্যমে তাদের বরণ করে নেন পুতিন।
তুর্কি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই শিশুসহ মোট ১০ জন রাশিয়ান এবং রাশিয়ায় বন্দী ১৬ জন পশ্চিমা এবং ভিন্নমতাবলম্বী রাশিয়ানদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত সবাইকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুতিন। সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানিয়ে পুতিন বলেন, 'শপথের প্রতি আপনার আনুগত্য এবং মাতৃভূমির প্রতি আপনার কর্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাদের মাতৃভূমি আপনাদের এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যায়নি'।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গের্শকোভিচসহ তিন মার্কিন নাগরিককে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি দিয়েছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মেরিন কর্মকর্তা পল হুইলান, সাংবাদিক আলসু কুরমাশেভা এবং ইভান গার্শকোভিচ বিমান থেকে নামার সময় তাদের স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস।
সরকারি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কারাগারে থাকা আট রুশ নাগরিক, রাশিয়ার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের বিনিময়ে রাশিয়ায় ফিরে এসেছেন।
ট্যাবলয়েড কমসোমোলস্কায়া প্রাভদা বলছে, মস্কো যে ভিন্নমতাবলম্বীদের মুক্তি দিয়েছে তারা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে, যারা তাদের অর্থ প্রদান করেছিল তাদের কাছে চলে গেছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ক্রেমলিন বন্দি বিনিময়কে মস্কোর বিজয় হিসেবে দেখছে।
মস্কোতে ফিরে আসা বন্দীদের মধ্যে ছিলেন একজন রাশিয়ান এফএসবি গোয়েন্দা ভাদিম ক্রাসিকভ। তিনি জার্মানিতে একজন সাবেক চেচেন বিদ্রোহী কমান্ডারকে নির্মম হত্যার জন্য বন্দী ছিলেন। জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে একজন দোষী সাব্যস্ত খুনিকে মুক্তি দিতে অনিচ্ছুক থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে।
কিন্তু ক্রেমলিনের জন্য ভাদিম ক্রাসিকভের মুক্তি নিশ্চিত করা এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
রুশ সংবাদপত্রগুলো তার একটা ধারণা দিয়েছে। সরকারি পত্রিকা রসিস্কায়া গেজেটার শিরোনাম হলো, 'আমরা আমাদের লোকদের ফিরিয়ে আনছি'।
পুতিনপন্থি ট্যাবলয়েড কমসোমোলস্কায়া প্রাভদার শিরোনাম, 'আমরা আমাদের নিজেদের লোকদের কখনো ত্যাগ করি না!"
ক্রেমলিন তার এজেন্ট ও গুপ্তচরদের কাছে ঠিক এই বার্তাটিই পাঠাতে চায় যে — কোনো গোয়েন্দা মিশনে কোনো রাশিয়ানকে ভিনদেশে পাঠানো হলে, ধরা পড়লেও তাদের বাড়ি ফেরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ক্রেমলিন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন