বাবার স্বাক্ষর জাল করে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন সৌদি যুবরাজ: সাবেক কর্মকর্তা
সাবেক সৌদি কর্মকর্তা সাদ আল জাবরি সোমবার (২০ আগস্ট) বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে অভিযোগ করেছেন, সৌদি আরবের যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) মোহাম্মদ বিন সালমান তার বাবা ও সৌদি আরবের রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের স্বাক্ষর জাল করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
সৌদি আরব প্রমাণ ছাড়া আল-জাবরির করা অভিযোগ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি। পরবর্তীতে আল-জাবরি অভিযোগগুলো বিস্তারিতভাবে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের কাছে স্বীকার করেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জাবরিকে "একজন অস্বীকৃত সাবেক সরকারী কর্মকর্তা" হিসেবে অভিহিত করেছে। তিনি দেশটির সাবেক মেজর জেনারেল ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন। জাবরি বর্তমানে কানাডায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।
সৌদি আরবের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে তার বিরোধে রয়েছে কারণ তার দুই সন্তান একটি মামলায় বন্দী, যা তিনি তাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার চেষ্টা হিসেবে বলেছেন। আল-জাবরি আরও অভিযোগ করেন, যুবরাজ সালমান তাকে হত্যা করতে চান।
"আমি বিরোধী নই এবং এই পরিস্থিতিতে নিজেকে আমি স্বেচ্ছায় ফেলিনি," আল-জাবরি এপি-কে বলেন। তিনি বলেন, "আমি একজন উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা ছিলাম, দেশের সুরক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলাম এবং হাজার হাজার সৌদি ও পশ্চিমা জীবনের সুরক্ষা প্রদানের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলাম। এখন আমি একজন বাবা, যে তার সন্তানদের মুক্তির জন্য সবকিছু করার চেষ্টা করছে।"
আল-জাবরি বলেন, যুবরাজ সালমান বর্তমানে সৌদি আরবের প্রকৃত নেতা হিসেবে কাজ করছেন এবং প্রায়ই তার বাবা ৮৮ বছর বয়সী রাজা সালমানের পরিবর্তে নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ সালমানের সাহসী আচরণ, বিশেষ করে ২০১৫ সালের ইয়েমেন যুদ্ধের শুরুতে ক্ষমতায় আসার পর তার শাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো বিরোধ বা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুকে দমন করার দিকে প্রসারিত হয়েছে।
আল-জাবরি প্রথমে বিবিসি-কে জানান, সৌদি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত একজন "বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য" কর্মকর্তা তাকে নিশ্চিত করেছেন— যুবরাজ তার বাবার স্থলে যুদ্ধের ডিক্রি [আদালত কর্তৃক আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত] স্বাক্ষর করেছেন। তখন যুবরাজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
পরে আল-জাবরি এপি-কে জানান, তিনি তৎকালীন ওবামা প্রশাসনের মার্কিন সহকর্মীদের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন যাতে সৌদি আরব "একটি বিমান হামলা অভিযান শুরু করে হুথি হুমকি অপসারণ, প্রতিরোধ তৈরি এবং স্থল যুদ্ধ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করে।"
জাবরির সাবেক প্রধান ও সৌদি আরবের তৎকালীন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ সৌদি আরবে একটি বৈঠক আয়োজন করে সেই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন।
তবে আল-জাবরি দাবি করেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সেই বৈঠকে "প্রকাশ্যে অসন্তোষ" প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি একটি স্থল আক্রমণের মাধ্যমে দুই মাসের মধ্যে হুথিদের পরাজিত করতে পারেন।
আল-জাবরি এপি-কে বলেন, "অস্বাভাবিকভাবে পরে একটি রাজকীয় আদেশ জারি করা হয় যা চূড়ান্ত পরিকল্পনাকে অগ্রাহ্য করে এবং একটি স্থল অভিযানের অনুমোদন দেয়— রাজাকে না জানিয়ে এবং একটি জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে।"
এখনো আল-জাবরি তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান সারা ও ওমর সৌদি আরবে বন্দী থাকায়, যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান তাকে হত্যা করতে চান বলে ভয় পাচ্ছেন।
"চুপ থাকা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। তাই আমার সন্তান ও দেশের স্বার্থে আমাকে কথা বলতে হয়েছে," আল-জাবরি এপি-কে বলেন।
তিনি বলেন, "যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই অপ্রয়োজনীয় বিরোধ শুরু করেছেন এবং একে তাত্ক্ষণিকভাবে শেষ করার ক্ষমতা রাখেন।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়