পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ অবরুদ্ধ, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) পূর্বঘোষিত সমাবেশ ঠেকাতে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ইসলামাবাদে ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আশেপাশের সব প্রধান সড়ক- মহাসড়কে শিপিং কন্টেইনার স্থাপন করেছে পাকিস্তান সরকার। এছাড়া সকাল থেকে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, পিটিআই বিক্ষোভ প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সরকার আধাসামরিক রেঞ্জার ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
গত বুধবার থেকে ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পুলিশ শিপিং কন্টেইনার স্থাপন করছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিক্ষোভ বানচালের জন্য প্রাদেশিক সরকার ভারী যন্ত্রপাতি মোতায়েন করেছে।
চলতি সপ্তাহে সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইমরানের সমর্থকরা খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত পদযাত্রার ঘোষণা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিটিআইয়ের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ ইসলামাবাদ থেকে পিটিআইয়ের কয়েকজন সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের রাজধানীতে প্রবেশে বাধা দিতে লাঠিপেটা করেছে ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে।
নওয়াজ শরিফের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খান পুলিশের করা দেড়শ'র বেশি মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও তিনি এখনও দেশটির জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক সমালোচক ও তার দলের দাবি এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং দুর্নীতির মামলায় ২০২৩ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে এবং অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড ও খাবার সরবরাহের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি ইমরান খানের দলকে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ করলে 'কোনো ছাড় দেওয়া হবে না'।
শুক্রবার ইসলামাবাদে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইমরান খানের সমর্থকরা সশস্ত্র হয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে আসছেন। তাদের এই সশস্ত্র বিক্ষোভ পাকিস্তানবাসীকে কী বার্তা দিচ্ছে, তা তাদের ভাবা উচিত।
নকভি বলেন, 'আমি খুব স্পষ্ট করে বলছি, তারা ইসলামাবাদে হামলা চালাতে যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, তবে সরকার কাউকে দেশের ক্ষতি করতে দেবে না।
অন্যদিকে, ইমরান খানের মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বিক্ষোভ প্রত্যাহারের সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
ইমরান খানের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি বার্তায় সমর্থকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারীরা আমাদের আতঙ্কিত করতে চায়।
শরিফের সরকার বলছে, সহিংস বিক্ষোভ চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে চায় ইমরান খানের দল।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে।
শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াবি শহরে ইমরান খানের সমর্থকরা জড়ো হয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করে।
প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গুন্ডাপুর এই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
এর আগে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে গত মাসে ইসলামাবাদের কাছে একটি বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই আলি আমিন গুন্ডাপুর।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি