সহকারী শান্তনু নাইডুর কাছে ‘মিলেনিয়াল ডাম্বলডোর’ ছিলেন রতন টাটা
সহকারী শান্তনু নাইডুর কাছ থেকে 'মিলেনিয়াল ডাম্বলডোর' উপাধি পেয়েছিলেন রতন টাটা।
'মিলেনিয়াল ডাম্বলডোর' বলতে বোঝানো হয়েছে নতুন প্রজন্ম বা আধুনিক যুগের ডাম্বলডোর। এখানে রতন টাটাকে জে. কে. রাউলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজের প্রজ্ঞাবান, দয়ালু এবং শক্তিশালী চরিত্র আলবাস ডাম্বলডোরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যিনি তরুণদের মাঝে প্রিয় ও সম্মানিত ছিলেন। আর 'মিলেনিয়াল' শব্দটি নতুন প্রজন্ম ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই উপাধির পেছনের গল্পটি ২০১৪ সালের। তখন শান্তনু নাইডু টাটা গ্রুপের একজন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। একদিন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একটি কুকুরের মৃত্যু দেখে তিনি কুকুরদের রক্ষার উদ্যোগ নেন।
শান্তনু ও তার বন্ধুরা মিলে এ কুকুরদের জন্য একটি উদ্যোগ নেন ঙার নাম দেওয়া হয় মোটোপ্যজ। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাড়ি চালকদের কাছে কুকুরদের দৃশ্যমান করা। এ জন্য তারা কুকুরদের জন্য প্রতিফলকযুক্ত বিশেষ কলার ডিজাইন করেন। এগুলো কুকুরদের গলায় পরিয়ে দিলে রাতেও চালকরা স্পষ্টভাবে কুকুরদের দেখতে পান। এর ফলে কুকুরগুলোকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।
এ কলারবেল্ট ডিজাইন করার পরদিনই শান্তনুর কাছে খবর আসে, "তাদের ডিজাইন করা কলারের কারণে একটি কুকুর বেঁচে গেছে।" সে ঘটনা স্মরণ করে শান্তনু বলেন, "আমি জানতাম না এটা আদৌ কাজ করবে কিনা। কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন আমি এ খবর পাই যে এ কলারের কারণে একটি কুকুরের জীবন বেঁচে গেছে। তা আমার মধ্যে এক অসাধারণ অনুভূতি তৈরি করেছিল।"
কিন্তু কলার তৈরি করতে গিয়ে হঠাৎই আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন শান্তনু। তার বাবা তাকে রতন টাটা বরাবর চিঠি লেখার পরামর্শ দেন। কারণ রতন টাটাও একজন কুকুরপ্রেমী। দ্বিধা নিয়েই রতন টাটাকে হাতে লেখা চিঠি দেন শান্তনু।
দুই মাস পর অবাক করে দিয়ে শান্তনুকে সেই চিঠির জবাব পাঠান রতন টাটা। রতন টাটা শান্তনু নাইডুর তৈরি করা মোটোপ্যজে শুধু অর্থায়নই করেননি, বরং শান্তনুকে তার পোষা কুকুরগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেখান থেকেই শান্তনু ও রতন টাটার বন্ধন আরও গভীর হয়।
অতঃপর শান্তনু নাইডু এমবিএ সম্পন্ন করতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান। কিন্তু যাওয়ার আগে রতন টাটাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, এমবিএ শেষে তিনি দেশে ফিরে এসে টাটা ট্রাস্টের জন্য কাজ করবেন।
প্রতিশ্রুতি অনুসারে, ২০১৮ সালে শান্তনু দেশে ফিরে আসেন এবং রতন টাটার সহকারী হিসেবে কাজে যোগ দেন।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও রতন টাটা ও শান্তনু নাইডুর মধ্যে এক মিল রয়েছে। ১৯৬২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচারে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন রতন টাটা। তার বহু বছর পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন শান্তনু।
২০২১ সালে শান্তনু নাইডু একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন, যার নাম 'আই কেইম আপন এ লাইটহাউজ: আ শর্ট মেমোয়ার অফ লাইফ উইথ রতন টাটা'। এই স্মৃতিকথায় তিনি তাদের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন।
রতন টাটার মৃত্যুতে শান্তনু নাইডু তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, "এই বন্ধুত্বের যে শূন্যতা আমার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য আমি বাকি জীবন চেষ্টা করে যাব। ভালোবাসার মূল্যই দিতে হয় কষ্ট পেয়ে। বিদায়, আমার প্রিয় লাইটহাউজ।"