প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লোৎসে জয় করলেন বাবর আলী
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের পর এবার পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ লোৎসে পর্বতের শীর্ষ (৮,৫১৬ মিটার) জয় করলেন বাবর আলী। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লোৎসে জয় করলেন তিনি।
আজ (২১ মে) স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬:০৪ মিনিটে) বাবর আলী লোৎসের চূড়ায় পৌঁছেছেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন তার এভারেস্ট অভিযানের প্রধান সমন্বয়কারী ফারহান জামান।
এর আগে রোববার (১৯ মে) নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবর।
এর আগে কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহী লোৎসের চূড়ায় পৌঁছাননি। এছাড়া আর কোনো বাংলাদেশিই একই অভিযানে এভারেস্ট ও লোৎসে জয় করেননি।
এক অভিযানে দুটি আট হাজারি—ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ক্লাইম্বিং ফেডারেশন স্বীকৃত ৮ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার ১৪টি পর্বত—জয় করা প্রথম বাংলাদেশিও বাবর আলীই।
ফারহান জামান বলেন, 'রবিবার সকালে এভারেস্টশৃঙ্গ জয়ের পর বাবর ওই দিনই ক্যাম্প-৪-এ নেমে আসেন। ওই রাতেই তার লোৎসেতে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ১৬ ঘণ্টা আরোহণের ক্লান্তির কারণে তার গাইড তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। সোমবার [২০ মে] বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবর লোৎসে আরোহণ শুরু করেন এবং ভোর ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে চূড়ায় পৌঁছে সেখানে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।'
ফারহান আরও বলেন, 'চূড়ায় পৌঁছানোর পর বাবর নামতে শুরু করেছেন। বিকেলের মধ্যে ক্যাম্প-৪-এ পৌঁছবেন বলে আশা করছি। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে আগামীকাল [২২ মে] তিনি ক্যাম্প-৩-এ চলে যাবেন। সময়সূচি অনুযায়ী ২৩ মে-ই তিনি বেজ ক্যাম্পে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।'
চট্টগ্রামের বাবর আলী পেশায় চিকিৎসক। তার এভারেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব 'ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স'-এর সদস্য বাবর।
বাবরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চড় ইউনিয়নে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তবে আগে থেকেই অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি ঝোঁক ছিল বাবরের।
এমবিবিএস পাশ করার পর কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিও করেছেন বাবর। তবে একটি অভিযানের জন্য ছুটি চেয়ে না পাওয়ায় তিনি শেষপর্যন্ত চাকরিই ছেড়ে দেন।
এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে গত ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও সরঞ্জাম কেনা শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে বিমানযোগে নেপালের লুকলা শহরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বাবর লুকলা থেকে ট্রেকিং শেষ করে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পে পৌঁছান ১০ এপ্রিল। মূল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে সেখান থেকে ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লাবুশে ইস্ট চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি। ওই চূড়ায় তিনি পৌঁছান ১৬ এপ্রিল। আর বেজ ক্যাম্পে ফিরে আসেন ২৬ এপ্রিল।
এর পর সেখান থেকে ২১ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-২ তে যান বাবর। মূলত ১৪ মে মধ্যরাতে সরাসরি ক্যাম্প-২-এ পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে বাবরের মূল অভিযান শুরু হয়। ১৮ মে ২৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-৩ এবং পরদিন ১৯ মে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ডেথ জোনে অবস্থিত ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছান বাবর।
২০১৪ সালে ভার্টিকাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাবর নেপাল ও ভারতের বিভিন্ন পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করেছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি নেপালের আমা দাবলাম পর্বতের শীর্ষে আরোহণ করেছেন। তিনি সাইক্লিং, ম্যারাথন ও স্কুবা ডাইভিংও করেন। তিনি সাইকেল চালিয়ে ভারতের দীর্ঘতম মহাসড়ক (কাশ্মীর-কন্যাকুমারী রুট) এবং পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বারব বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চূড়া আরোহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সের্গো রি (৪,৯৪৮ মিটার), সূর্য পিক (৫,১৪৫ মিটার), মাউন্ট ইউনাম (৬,১১৬ মিটার), মাউন্ট ফ্যাবরাং (৬,১৭২ মিটার), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নীলদা (৬,৩০৩ মিটার), মাউন্ট শিবা (৬,১৪২ মিটার), মাউন্ট রামজাক (৬,৩১৮ মিটার), মাউন্ট আমা ডাবলাম (৬,৮১২ মিটার) এবং চুলু ইস্ট পিক (৬,০৫৯ মিটার)।
এছাড়াও বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন বাবর। সাইক্লিং, স্কুবা ডাইভিংও করেন তিনি।
বাবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গত বছর সাইকেল চালিয়ে ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পৌঁছান। কাশ্মীর-কন্যাকুমারী রুটটি ভারতের দীর্ঘতম মহাসড়ক। এর দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটার।
বাবরের এভারেস্ট অভিযানে খরচ হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। তার এ অভিযানে স্পন্সর করেছে ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়াও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ক্লজ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী ও পিরি এ অভিযানে বাবরকে সহায়তা করেছে।