তীব্র বায়ুদূষণে পাকিস্তানের লাহোরে 'গ্রিন লকডাউনের' পর এবার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
পাকিস্তানের লাহোর শহরে তীব্র বায়দূষণের কারণে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে 'গ্রিন লকডাউন' বা সবুজ লকডাউন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, লাহোরের ৫০ শতাংশ অফিস কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করবেন।
এই পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া অন্য পদক্ষেপগুলো হলো– ইঞ্জিনচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করা এবং ফিলটার ছাড়া বারবিকিউ বিক্রি বন্ধ করা।
এর আগে, বুধবার (৩০ অক্টোবর) পাঞ্জাব সরকার শহরের বায়ুদূষুষণ কবলিত অঞ্চলে 'গ্রিন লকডাউন' আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
পাঞ্জাবের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, "এই ধোঁয়াশা শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্কুলে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা উচিত।"
পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোর রোববার (৩ নভেম্বর) আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে।
আইকিউএয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার শহরের বায়ুমান সূচক (একিউআই) ১,০০০ পেরিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ৩০০-এর বিপজ্জনক একিউআই মাত্রার চেয়ে এই পরিমাণ অনেক বেশি।
বায়ু মান সূচক মূলত বাতাসে বিভিন্ন দূষণ কণার মাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয়। লাহোরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার মাত্রাও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
পাকিস্তানের পরিবেশ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজা জাহাঙ্গীর আনোয়ার জানিয়েছেন, ধোঁয়াশার 'প্রধান কারণ' ভারত সীমান্তে ফসলের খড় পোড়ানোর প্রচলন।
মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, "ভারত থেকে প্রবল বাতাসের মাধ্যমে এই ধোঁয়া পাকিস্তানে আসছে।"
এই সমস্যার সমাধানে ভারত-পাকিস্তান আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রাদেশিক সরকার এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেবে।
পাকিস্তানের সরকার জনগণকে বাড়িতে থাকার এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু এলাকায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পানির পাম্পযুক্ত যানবাহনের মাধ্যমে বাতাসে পানি ছিটানো হচ্ছে।
আগামী শনিবার পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। তখন স্কুল বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিষাক্ত বায়ু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গত মাসে লাহোরের শিক্ষার্থীদের জানুয়ারি পর্যন্ত বাইরের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি, শিশুদের যাতায়াতের সময় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা এড়াতে স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়।
একজন অভিভাবক লিলি মির্জা (৪২) এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, "মা হিসেবে আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না... আমাদের কারও জানানোর দরকার, ঠিক কী ঘটেছে? কোথাও কি দূষণের বোমা ফেটেছে?"
প্রতিবছর শীতে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে লাহোরে নির্মাণাধীন স্থাপনার ধুলো ও যানবাহন থেকে নিঃসরিত ধোঁয়া আটকা পড়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। ঠান্ডা ও ঘন বায়ু মাটির কাছাকাছি দূষণ কণাগুলোকে আটকে রাখায় দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।