'ভয়াবহ' বায়ুদূষণে শ্বাসরুদ্ধপ্রায় ভারতের দিল্লি
শহরের বাতাসের মান এত খারাপ হয়ে পড়েছে যে ধোঁয়াশার পুরু আস্তরণে ঢেকে গেছে ভারতের দিল্লি। বর্তমানে দেশটির রাজধানী এবং এর আশেপাশের শহরগুলোতে দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অন্তত ৩০-৩৫ গুণ বেশি। খবর বিবিসির
প্রতিবছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালজুড়ে দিল্লি এবং উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার হয়। এর কারণ- তাপমাত্রা অনেক কমে যাওয়া, ধোঁয়া, ধূলিকণা, বাতাসের গতি কমে যাওয়া, যানবাহনের দূষণ এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো প্রভৃতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বছর সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার)- এর তথ্যানুসারে, বুধবার সকালে দিল্লির বেশ কিছু অংশে দূষণের মাত্রা ৫০০ পয়েন্টে পৌঁছেছিল।
প্রতিমুহূর্তের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটুকু নির্মল বা দূষিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দিয়ে থাকে। একিউআই বায়ুতে থাকা ক্ষুদ্র কণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ পরিমাপ করে। এই ক্ষুদ্র কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, একিউআই স্কোর ১০০ এর নিচে থাকলে ওই বাতাস মানুষের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। আর স্কোর ৪০০-৫০০ এর মাঝামাঝি থাকা মানে ওই অঞ্চলে দূষণের মাত্রা 'ভীষণ বিপজ্জনক' পর্যায়ে রয়েছে।
দিল্লির স্যাটেলাইট শহরগুলো- যেমন নয়ডা ও গুরগাঁও-তেও দূষণের মাত্রা ৫০০ পয়েন্টে পৌঁছেছিল।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যে বিষাক্ত বায়ু ও ধোঁয়াচ্ছন্নতা বিরাজ করছে। এমনকি এর পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব হওয়ার খবরও এসেছে।
ধোঁয়াশা এতটাই ঘন যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
কয়েকদিন আগে নাসা স্যাটেলাইট ইমেজ শেয়ার করেছিল, যেখানে দেখা যাচ্ছে উত্তর ভারত ও প্রতিবেশী পাকিস্তানের কিছু অংশে ধোঁয়াশার চাদর ঢেকে গেছে।
বিষাক্ত বায়ু মানুষের স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে।
দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম 'লোকাল সার্কেলস'-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহে দূষণের কারণে ৮১ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
এছাড়া, এক তৃতীয়াংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা এই সময়ে কাশির সিরাপ খেয়েছেন।
দিল্লি কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতরে থাকার এবং যানবাহনের ধোঁয়া নির্গমন কমাতে গণপরিবহন ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে।
আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী ছিল দিল্লি।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পর বিশ্বের তৃতীয় দূষিত দেশ ভারত।
ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে বায়ু দূষণ একটি গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত শিল্পায়নের পাশাপাশি; পরিবেশ আইনের দুর্বল প্রয়োগ দেশটিতে দূষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি