গাজা সংকটের ‘প্রধান মধ্যস্থতাকারী’ হতে যাচ্ছেন ট্রাম্প!
জিম্মি পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি সমর্থনকারী ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখন আশা করছেন, নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ত হামাসের হাতে জিম্মিদের বিনিময়ের মাধ্যমে গাজা যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারবেন।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসেরও কম সময় বাকি। এ অবস্থায় শিগগিরই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মিদের মুক্তি হতে পারে বলে মনে হচ্ছে না।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব নিতে যাওয়া ক্যারোলিন লেভিট এক্সিওসকে বলেছেন, ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং ইসরায়েলকে সমর্থন করবেন।
তিনি বলেন, 'ট্রাম্প আমেরিকার নেগোশিয়েটর ইন চিফ (প্রধান মধ্যস্থতাকারী) হিসেবে কাজ করবেন এবং জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন।'
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ যখন ট্রাম্পকে নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন, তখন তিনি ট্রাম্পকে বলেছিলেন যে ১০১ জন জিম্মির মুক্তির বিষয়টি 'একটি জরুরি ইস্যু'।
হারজগ ট্রাম্পকে বলেন, 'আপনাকে জিম্মিদের বাঁচাতে হবে'। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন যে সম্ভব প্রায় কোনো জিম্মিই আর বেঁচে নেই। হারজগ তখন জানান যে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ধারণা করছে, জিম্মিদের অর্ধেক এখনও বেঁচে আছে।
একটি সূত্র এক্সিওসকে জানিয়েছে, হারজগের এ কথায় ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি এটি জানতেন না।
কথোপকথনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও দুটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হারজগ। এ সময় তিনি আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাইডেনকে আলোচনার আহ্বান জানান। বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর দুদিন পর ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে বাইডেন জিম্মিদের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং প্রস্তাব করেন যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তারা একসঙ্গে কাজ করবেন।
দুটি সূত্রের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনের পর বাইডেন আমেরিকার জিম্মিদের পরিবারগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, তারা (জিম্মি) ফিরে আসার সব কৃতিত্ব যদি ট্রাম্প পান তাতেও আমার কোনো অসুবিধা নেই।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে শ্রদ্ধা করেন, যিনি ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতিকালে একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৮১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইরানের সঙ্গে একটি জিম্মি চুক্তি সই করেন। পরের দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রিগ্যান। এরপরই ৫২ জন মার্কিন নাগরিক ইরান থেকে পান, যাদের ৪৪৪ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
গাজায় হামাসের হাতে ৪১২ দিন ধরে বন্দি মার্কিন নাগরিক ওমর নেত্রার অভিভাবক ওরনা ও রোনেন ওয়াশিংটন পোস্টে এক খোলা চিঠিতে ট্রাম্পের প্রতি লিখেছেন, তারা বিশ্বাস করেন ট্রাম্প রিগ্যানের সেই মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক