অনাস্থা ভোটে হারলেন প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে, ফ্রান্সে সরকারের পতন
ফ্রান্সের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পার্লামেন্টের ৫৭৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩১ জন বার্নিয়ে সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে, ক্ষমতা নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হলেন বার্নিয়ে।
বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছিল, বার্নিয়ে বিতর্কিতভাবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে ভোট ছাড়াই বাজেট পাস করেন। এই বাজেটে ৬০ বিলিয়ন ইউরোর ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব ছিল এবং বিরোধীরা এটিকে "অগ্রহণযোগ্য" বলে অভিহিত করেন।
বুধবারের অনাস্থা ভোটে সংসদ সদস্যদের হ্যাঁ ভোট বা বিরত থাকার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮৮ ভোট, কিন্তু মোট ৩৩১ জন সংসদ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে রায় দেন।
অনাস্থা ভোটে পরাজয়ের ফলে বার্নিয়ে তার সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হবেন। তার পাশ করা বাজেট বর্তমানে অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করা পর্যন্ত তিনি (বার্নিয়ে) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটের আগে সংসদে বার্নিয়ে বলেন, "আমরা কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। ঋণের বাস্তবতা থেকে পালানো সম্ভব নয়।"
তিনি আরও বলেন, "কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য আনন্দের নয়। তবে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এটি প্রয়োজন।"
ফ্রান্সে গ্রীষ্মের আগাম নির্বাচনে কোনো দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এরই মধ্যে অনাস্থা ভোটে সরকারের পতন ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়াবে।
বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) এবং ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) উভয়েই মিশেল বার্নিয়ে-এর পদত্যাগ দাবি করে। আরএন নেত্রী মেরিন লে পেন এই বাজেটকে "ফরাসি জনগণের জন্য বিষাক্ত" বলে মন্তব্য করেন।
টিএফ১ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লে পেন বলেন, "বার্নিয়েকে সরানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তবে আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ চাই না।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, "যদি ভোটারদের মতামত উপেক্ষা করা হয়, তাহলে প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ আরও বাড়বে।"
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে তিনি জানিয়েছেন, অনাস্থা ভোটের ফলাফল তার পদে প্রভাব ফেলবে না এবং তিনি পদত্যাগ করবেন না।
তিনি দ্রুত নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এই সপ্তাহের শেষে নটরডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধনে যোগ দিতে প্যারিস আসছেন নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা এবং নতুন নির্বাচন জুলাইয়ের আগে অসম্ভব হওয়ায় ফ্রান্সের রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।