আসাদের পতনের পর সিরিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত যে কারণে দখলে নিল ইসরায়েল
বাশার আল আসাদের পতনের পর একদিকে দেশটির জনগণ মুহূর্তটি উদ্যাপন করছিল। অন্যদিকে সিরিয়ার মিলিটারি স্থাপনায় লাগাতার বোমাবর্ষণ শুরু করে করে ইসরায়েল। দেশটির যুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো যাতে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে না চলে যায় তাই এই পদক্ষেপ। তেল আবিবের দাবি, তারা সিরিয়ায় প্রায় ৫০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম হয়েছে। খবর বিবিসির।
একইসাথে সিরিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মাউন্ট হারমন দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। যদিও তেল আবিবের দাবি, তারা সাময়িক সময়ের জন্য এটি দখল করেছে।
জেরুজালেম ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজির (জেআইএসএস) ডিরেক্টর এফ্রাইম ইনবার বলেন, "লেবানন, সিরিয়া, ইসরায়েলের দিক থেকে এটি বেশ উঁচু স্থান। কৌশলগত বিবেচনায় এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পাহাড়ের বিকল্প নেই।"
মাউন্ট হারমন পর্বতটি সিরিয়া ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যকার বাফার জোনে অবস্থিত। গত ৫০ বছর ধরে এক চুক্তির আওতায় এটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে রেখেছিল দুই দেশ। তবে গত সপ্তাহে আসাদ রেজিমের পতনের পর চুক্তি থেকে সরে এসে তা দখল করে তেল আবিব।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ গত শুক্রবার বলেন, "সিরিয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে হারমন পর্বতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা নিরাপত্তার দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।"
শুধু পর্বত নয়, বরং ইসরায়েল সেনারা আরও অগ্রসর হয়ে বেকাসেম পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যা কি-না সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে। যদিও সিএনএন-এর পক্ষ থেকে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা দামেস্ক অভিমুখে কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না। তবে গোলান মালভূমির বাফার অঞ্চল দখলের কথা তারা স্বীকার করেছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে গোলান মালভূমির একাংশ দখল করে নেয় ইসরায়েল। ১৯৭৩ সালে পাল্টা অভিযান চালিয়ে সিরিয়া ঐ অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। বরং ১৯৮১ সালে ইসরায়েল দখলদারিত্বের এলাকা আরও বিস্তীর্ণ করে; যা কি-না আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তবে গতবারের ট্রাম্প প্রশাসন গোলানে ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলকে স্বীকৃতি প্রদান করে; যা ঐ সময় ব্যাপক সমালোচনায় জন্ম দিয়েছিল।
গত কয়েক দশক ধরে হারমন পর্বতের নিম্নাঞ্চলের দিকে ইসরায়েলের কিছু কার্যক্রম ছিল। তবে সবচেয়ে উঁচু স্থানটি সিরিয়ার অধীনেই ছিল।
আসাদের পতনের পর বোমাবর্ষণের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, "সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। তবে নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আমরা অবশ্যই সবকিছু করতে প্রস্তুত।"
হারমন পর্বত ইসরায়েলের অধীনে থাকলে তা দেশটিতে বেশ ভালো সুবিধা দেবে। কেননা এটি প্রায় ৯,২৩২ ফিট উঁচু; যা সিরিয়া ও ইসরায়েলের সবচেয়ে উঁচু স্থান। আর লেবাননের এরথেকে মাত্র একটি পর্বত উঁচুতে রয়েছে।
ইনবার বলেন, "মনে করা হয় যে, মিসাইলের যুগে ভূমি ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটা একদম সত্য নয়।"
২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ইনবার হারমন পর্বতের কৌশলগত সুবিধা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "এর ফলে সিরিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে নজরদারি করা সক্ষম হবে। একইসাথে যেকোনো আক্রমণের ক্ষেত্রে ইসরায়েল আগাম সতর্কতা পাবে।"
হারমন পর্বত দামেস্ক থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। ফলে এই স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা মানে সিরিয়ার রাজধানীকে আর্টিলারি কামানের রেঞ্জের ভেতর নিয়ে আসা।
সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা মোহাম্মদ আল-জোলানি অবশ্য গতকাল (শনিবার) ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে জর্ডানের উপ-প্রধানমন্ত্রী আয়মান সাফাদি অভিযোগ করেছেন যে, ইসরায়েল সিরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোতে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে তার সুযোগ নিচ্ছে।
এদিকে হারমন পর্বতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে সাময়িক আখ্যা দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, "শূন্যতার সুযোগ নিয়ে গোলানে বসবাসরত ইসরায়েলি নাগরিকদের ৭ অক্টোবরের মতো হুমকিতে রাখার সুযোগ আমরা দেব না।" অন্যদিকে সেনা প্রত্যাহারকে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ইনবার বলেন, "সেনারা সেখানকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই চেষ্টা করবেন।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান