সিরিয়ার বিজয়ী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে 'সরাসরি যোগাযোগ' রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে। এটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রকাশ্য যোগাযোগ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জর্ডানে এক বৈঠকের পর এই তথ্য নিশ্চিত করেন। খবর বিবিসি'র।
এইচটিএস বর্তমানে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী, যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
ব্লিঙ্কেন জর্ডানে আরব, তুরস্ক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলো সিরিয়াকে অস্থিতিশীলতার দিকে যেতে দিতে চায় না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইসের বিষয়ে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগাযোগ করেছে।
ব্লিঙ্কেন জর্ডানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা এইচটিএস এবং অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।'
তবে জর্ডানের আলোচনায় সিরিয়ার কোনো প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে অংশ নেওয়া আটটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানান, তারা একটি ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া দেখতে চান, যা সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ভুগবে না।
এছাড়াও আলোচনায় অনুপস্থিত ছিল ইরান এবং রাশিয়া—যারা দীর্ঘদিন ধরে আসাদের সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল।
বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসানের পর বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে সিরিয়ায় একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা মুহাম্মদ আল-বাশিরকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করলে আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান।
১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক বিজয়ের পর দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে সিরিয়ায় এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের দাবি জানানো হয়েছে, যা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করবে এবং কোনোভাবেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য আশ্রয়স্থল হবে না।
জর্ডানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন মধ্যপ্রাচ্যসহ সমগ্র অঞ্চলে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলো সিরিয়াকে আরেকটি লিবিয়ার পথে যেতে দিতে চায় না।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, সিরিয়ার বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো সংরক্ষণ এবং সংস্কার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, 'কখনোই সন্ত্রাসবাদকে এই উত্তরণের সময় সুযোগ নিতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।'
অন্যদিকে, ইসরায়েল সিরিয়ায় নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা আঞ্চলিক নিন্দার মুখে পড়েছে।
এইচটিএস অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের অতীত জিহাদি কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বয় জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।