কৃষ্ণসাগরে তেলবাহী দুটি রুশ জাহাজ বিধ্বস্ত, সাগরে ছড়িয়ে পড়েছে তেল
রাশিয়ার তেলবাহী দুটি জাহাজ কৃষ্ণ সাগরে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর ফলে সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ছে। খবর বিবিসির।
রাশিয়ার সাউদার্ন ট্রান্সপোর্ট প্রসিকিউটরস অফিস থেকে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, একটি জাহাজের সামনের অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং পানিতে তেলের দাগ স্পষ্ট।
উভয় জাহাজই ভেসে গিয়ে উপকূলে আটকে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজন ক্র নিহত হয়েছেন।
রাশিয়া এবং ক্রিমিয়াকে বিভক্তকারী কের্চ প্রণালিতে ঘটনাটি ঘটেছে।
টাগবোট, হেলিকপ্টার এবং ৫০ জনের বেশি কর্মীর সমন্বয়ে পরিচালিত উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে একটি জাহাজ থেকে ১৩ জন ক্রুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় জাহাজে থাকা ১৪ জন ক্রূর কাছে তাৎক্ষণিক জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাদের আটকে থাকতে হতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনার মোকাবিলায় উপপ্রধানমন্ত্রী ভিতালি সাভেলিয়েভের নেতৃত্বে একটি দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ অপরাধজনিত অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করছে।
লয়েডস লিস্টের শিপিং শিল্প বিশেষজ্ঞ মিশেল বকমান বিবিসিকে জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দুটি জাহাজ রাশিয়ার কোম্পানি ভোলগাট্যাঙ্কারের মালিকানাধীন এবং আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট।
তাস নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে রাশিয়ান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি জাহাজে প্রায় ৪,৩০০ ডেড ওয়েট টন তেল ছিল।
বকমান আরও উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আন্তর্জাতিকভাবে পরিবহনের জন্য সাধারণত ১,২০,০০০ ডেড ওয়েট টনের মতো বড় ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকার ব্যবহৃত হয়। এর মানে এই ট্যাংকারগুলো সম্ভবত রাশিয়ার নদীপথ বা উপকূলীয় অঞ্চলে তেল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।
কের্চ প্রণালি রাশিয়ার শস্য রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ এবং এটি অপরিশোধিত তেল, ফুয়েল অয়েল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির জন্যও ব্যবহৃত হয়।
২০০৭ সালে কের্চ প্রণালীর কাছে নোঙর অবস্থায় ভয়াবহ ঝড়ে আরেকটি তেলবাহী জাহাজ ভলগোনেফট-১৩৯ দ্বিখণ্ডিত হয়, ফলে ১,০০০ টনের বেশি তেল ছড়িয়ে পড়ে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালানোর পর থেকে রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথিত 'ঘোস্ট ফ্লিট' বা গোপন তেলবাহী জাহাজের বহর ব্যবহার করে তেল পরিবহনের অভিযোগ উঠেছে। এসব ট্যাংকার সাধারণত খারাপভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং যথাযথ বিমা থাকে না। সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বিমা ছাড়াই এ জাহাজগুলো চলাচল করে। তবে, মিশেল বকমানের মতে, রোববারের ঘটনায় জড়িত জাহাজগুলো এই গোপন বহরের অংশ ছিল বলে মনে হয় না।