ইউক্রেনে গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ, ইউরোপে সস্তা রাশিয়ান গ্যাসের যুগ সমাপ্ত
ইউক্রেনের গ্যাস ট্রানজিট অপারেটর নাফটোগাজ এবং রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের মধ্যে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। খবর বিবিসির।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ রাশিয়াকে 'আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার আয় করতে' দেবে না। এজন্য ইইউকে প্রস্তুতি নিতে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
ইউরোপীয় কমিশন পরে জানিয়েছিল, ইউরোপের গ্যাস সিস্টেম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে এবং এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত।
তবে স্লোভাকিয়া, যা এখনও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে। মোলডোভা, যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়, ইতোমধ্যে গ্যাসের সংকটে পড়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস পরিবহন করছিল, তবে এখন সেই চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে রুশ গ্যাসের যুগের আপাতত অবসান হয়েছে।
তবে রাশিয়া এখনও তুরস্ক, হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ায় কৃষ্ণ সাগরের তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পাঠাতে পারবে।
এই মুহূর্তে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহে তেমন কোনো বড় প্রভাব পড়েনি, তবে এই পরিবর্তনের কৌশলগত এবং প্রতীকী গুরুত্ব ব্যাপক। রাশিয়া তার এক গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারিয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করছেন, এতে ইউরোপীয় দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর গ্যাস আমদানি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয় , কিন্তু পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ এখনও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে রাশিয়া বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউরো আয় করে।
২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট গ্যাস আমদানির মাত্র ১০ শতাংশ ছিল রাশিয়া থেকে, যা ২০২১ সালে ছিল ৪০ শতাংশ। তবে স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়াসহ ইইউভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছিল।
অস্ট্রিয়ার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, পর্যাপ্ত মজুত ও বিকল্প উৎস থাকায় তারা কোনো বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে না। তবে ইউক্রেনের গ্যাস পরিবহন চুক্তির পরিবর্তনের কারণে স্লোভাকিয়া ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। স্লোভাকিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার গ্যাসের প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করছে এবং অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও ইতালিতে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ট্রানজিট ফি আয় করছে।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেছেন, এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলবে, তবে রাশিয়ার জন্য তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। শুক্রবার তিনি মস্কো সফর করে পুতিনের সাথে আলোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছেন।
ফিকোর মস্কো সফরের পর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাকে অভিযুক্ত করেছেন যে, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে 'যুদ্ধে অর্থায়ন ও ইউক্রেনকে দুর্বল করতে' সহায়তা করতে চাচ্ছেন।