পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডের দখল নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা নাকচ করেননি ট্রাম্প
মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করে পানামা খাল পুনরুদ্ধার এবং গ্রিনল্যান্ড দখলের সম্ভাবনা নাকচ করেননি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম। তিনি এর জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে একটি মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মার-এ-লাগোতে মঙ্গলবার এক প্রেস কনফারেন্সে পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ ব্যবহার না করার কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, "আমি এ সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা এগুলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন।"
এ মন্তব্য বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে কারণ ট্রাম্প এই মাসের শেষে আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে আসবেন এবং শক্তিশালী আমেরিকান জাতীয়তাবাদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করবেন।
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে চীনের হাতে দাবি করে ট্রাম্প বলেন, "পানামা খাল আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। দেখুন, পানামা খাল আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা চীন পরিচালনা করছে। আমরা পানামা খাল পানামাকে দিয়েছিলাম, চীনকে নয়।"
গ্রিনল্যান্ড সম্পর্কে আলাপ করতে গিয়েও ট্রাম্প ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি ডেনমার্ক তার আঞ্চলিক স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাহলে তিনি "ডেনমার্কের ওপর খুব উচ্চ শুল্ক আরোপ করবেন।"
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন মঙ্গলবার বলেছেন, "গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ তার জনগণের দ্বারা নির্ধারিত হবে। গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।"
ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড সফরে গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে 'ম্যাক গ্রিনল্যান্ড গ্রেট এগেইন' হ্যাট বিতরণ করেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, তিনি শুধু পর্যটক হিসেবে সেখানে গিয়েছেন।
ট্রাম্প তার ছেলের সফরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, এবং দাবি করেছেন যে এই সফর বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পানামা খাল আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে ১৯৯৯ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছিল ওয়াশিংটন। তবে গ্রিনল্যান্ড এখনো ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। বারবার দেশটি আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য পানামা খাল নিয়ে তার ক্রমবর্ধমান সংঘাতমূলক মন্তব্যের অংশ। এর মধ্যে সম্প্রতি তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যে, "পানামা খালকে সম্পূর্ণভাবে, দ্রুত এবং বিনা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফেরত দেওয়ার" দাবি জানাবে যুক্তরাষ্ট্র।
পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের দাবির মন্তব্যের জবাবে বলেন, "খালের প্রতিটি বর্গমিটার" পানামার সার্বভৌমত্বের অধীনে থাকবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য পানামা খাল নিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ১৯১৪ সালে আমেরিকা খালটি নির্মাণ করে এবং ২০ শতকের বেশিরভাগ সময় এটি পরিচালনা করে। তার মন্তব্য পানামায় ১৯৮৯ সালের আমেরিকান আক্রমণের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
১৯৮৯ সালে আমেরিকা "অপারেশন জাস্ট কজ" শুরু করে। এর মাধ্যমে পানামার স্বৈরাচারী নেতা ম্যানুয়েল নরিয়েগাকে উৎখাত করার জন্য ৯ হাজার সেনা পাঠানো হয়। নতুন সৈন্য পাঠানোর আগেই ১২ হাজার সৈন্য পানামায় অবস্থান করছিলেন। এতে ২৩ জন মার্কিন সৈন্য মারা যান এবং পানামার ৫০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দিত হয়।
এদিকে, ট্রাম্প অন্য কিছু অঞ্চলেও চাপ বাড়াচ্ছেন, যেমন কানাডাকে "৫১তম রাজ্য" হিসেবে যুক্ত করার কথা বলছেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে "গভর্নর" বলেও মজা করছেন।
ট্রুডো ট্রাম্পের মন্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, "কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না। আমাদের দুই দেশের কর্মী ও সম্প্রদায় একে অপরের প্রধান বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে লাভবান হয়।"